👉প্রানীহত্যা পাপ।প্রানীদের মন আছে,দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে পারে।প্রানীহত্যা বন্ধ করুন। উপরোক্ত কথাগুলো বললেই একদল লোক এসে হামলা করে এসে বলে তবে শুধু জল খেয়েই জীবন ধারণ করুন কারন উদ্ভিদেরাও কিন্তু জীব।এরাও দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে পারে। সত্যিই তো!!উদ্ভিদরাও তো জীব তবে কেন মাছ মাংস খাওয়া যাবে না আর এদের খাওয়া যাবে এমন আহম্মকের মতো কথা মানুষ বলে??
উপরোক্ত প্রশ্নের সমাধান দিচ্ছি কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যেগুলো বেশিরভাগ মানুষদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনতে হয়।।
👉★উদ্ভিদেরাও ব্যাথা অনুভব করতে পারে তবে কেন ওদের না খাওয়ার পক্ষে কথা বলি না?? ★উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে অবশ্যই বুঝতে হবে আমরা মানুষেরা কিভাবে ব্যাথা অনুভব করি।ধরুন আপনি একটা গরম চুলায় হাত দিলেন।যখনই আপনি এমন করবেন তখনই গরম চুলার তাপ আপনার ত্বকের টিস্যুর ক্ষতি করবে।এই ড্যামেজ টিস্যুটি আপনার ত্বকে উপস্থিত মাইক্রোস্কোপিক ব্যাথা রিসেপ্টর দ্বারা নিবন্ধিত হয়।সুতরাং আপনি একটা গরম চুলা স্পর্শ করার সাথে সাথে রিসেপ্টর সক্রিয় হয়ে উঠে এবং এটি স্নায়ু ফাইবারে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল পাঠায়।এই স্নায়ু ফাইবার আপনার স্পাইনাল কর্ডের সাথে যুক্ত।সুতরাং যখন স্পাইনাল কর্ড একটি ব্যাথার সংকেত পায় তখন এই সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরিত হয় এবং পরিশেষে আপনার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ তথ্য প্রক্রিয়া করে একটা উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং আপনি ব্যাথা অনুভব করতে পারেন।এক্ষেত্রে ব্যাথার ফাংশন আমাদের সম্ভাব্য বিপদ থেকে দূরে থাকার জন্য রেড লাইট সংকেত হিসেবে কাজ করে।কিন্তু এই এটি শুধু এক ধরনের ব্যাথা যেখানে টিস্যু সংবেদন গ্রহণ করে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা আছে।ধরুন আপনি অতীতে কাউকে খুব ভালোবাসতেন।এই অতীতের স্মৃতিও আপনাকে ব্যাথা দিতে পারে যাকে বলে ইমোশনাল পেইন বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে সাইকোলজিক্যাল পেইন। এখন বিভিন্ন ধরনের ব্যাথার মধ্যে একটা কমন জিনিস আছে যে আপনাকে ব্যাথা অনুভব করতে হলে একটা কার্যকর সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম এবং ব্রেইন থাকতে হবে। তাহলে উদ্ভিদ কি ব্যাথা অনুভব করতে পারে? যখন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন আসে তখন বলতে হবে তাদের কোন সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা ব্রেইন নেই যা তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে এবং এজন্য উদ্ভিদ আবেগ বা দুঃখ,কষ্ট,ব্যাথা ইত্যাদি অনুভব করতে পারে না। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পরও অনেকে যেসব প্রশ্ন করে থাকেঃ ★প্রশ্নঃ মাংসাশী প্রানীদের দাঁতের গঠন আর পাকস্থলী এবং মানুষের দাঁতের গঠন আর পাকস্থলীর মধ্যে যথেষ্ট মিল আছে।তবে তো আমরাও মাংসাশী, তাই নয় কি? ★উত্তরঃ প্রায় সবাইই উপরোক্ত দুইটিই মিল দেখাতে পারে।তাহলে আমি একটা মাংসাশী প্রাণী আর একটা মানুষের খাদ্য গ্রহনের ব্যবস্থার মধ্যে আরো বেশি পার্থক্য দেখাতে পারি।। ১। প্রায় সব মাংসাশী এবং সর্বভুক প্রানী তাদের শিকারকে ধরতে ধারালো নখর ব্যবহার করে যা মানুষের তেমন ধারালো নেই। ২। যখন আমাদের চারপাশ খুব বেশি গরম হয়ে উঠে তখন শরীর থেকে তাপ বের করে ঠান্ডা করার জন্য আমাদের শরীর থেকে ঘাম ঝড়তে শুরু করে আর মাংসাশী প্রাণীরা তাদের জিহবা বের করে দিয়ে শরীর থেকে তাপ বের করে। ৩।আমাদের চোয়ালের মাধ্যমে একটা পশুকে কামড় দিয়ে তাকে হত্যা করার ক্ষমতা নেই যেমনটা সর্বভুক প্রানীরা করে।অতএব মানুষকে পশু হত্যা করার জন্য এমন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয় যা অবশ্যই প্রাকৃতিক নয়। ৪। লম্বা সূচালো কর্তন দাঁত থাকা মানেই এই না যে সে মাংসাশী প্রাণী। যেমন গরিলার বিশাল বড় বড় ক্যানাইন দাঁত রয়েছে কিন্তু ওরা বিশুদ্ধ উদ্ভিদ-খাদক।একটা প্রানীর কাচা মাংসকে কামড় দেওয়ার জন্য আমাদের দাঁত এমন ভাবে ডিজাইন করা নয় বরং আপেল বা নাশপাতির মতো কঠিন ফলকে কামড় দেওয়ার মতো ডিজাইন করা। ৫।আমাদের পাকস্থলীর এসিড কাঁচা মাংস হজম করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয় যেমনটা একটা মাংসাশী প্রাণীর ক্ষেত্রে কাজ করে।। ৬।মানুষ অন্যান্য শাকাহারী প্রানীদের মতো জল ঢুক দিয়ে খায় যেখানে সর্বভুকরা জল তাদের জিহবা দিয়ে তুলে চুষে চুষে খায়। ৭। অন্যান্য শাকাহারী প্রানীদের মতো একজন মানুষ তাদের চোয়াল উপরে নিচে নিতে পারে,এক পাশ থেক অন্যপাশে নিতে পারে এবং তাই তারা তাদের খাদ্য চিবিয়ে এবং গুড়ো করতে পারে।অন্যদিকে সর্বভুক এবং মাসাংশী প্রানীরা তাদের চোয়ালকে কেবল কেবল উপর নিচে নিতে পারে।একপাশ থেকে অন্য পাশে সরাতে পারে না। তারা শুধু খাদ্য ছিড়তে আর গিলতে পারে কিন্তু গুড়ো করতে পারে না। ৮।এবার আসি পরিপাকতন্ত্রের বেলায়।আমাদের পরিপাকতন্ত্র আমাদের টর্সোর দৈর্ঘ্যের আটগুন যেখানে সর্বভুকদের পরিপাকতন্ত্র তাদের বডির তুলনায় তিনগুণ লম্বা। এরকম আরো অনেক পার্থক্য দেখানো যায়।তাই বলে কি আমরা সবকিছু খেতে পারি না?কই,সবই তো খেতে পারি!! হ্যাঁ আমরা সব খেতে পারি কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে।যেমন আদিমকালেও যখন মানুষ পশু শিকার করত তখন ফাঁদ পেতে শিকার করতে হতে যা একটা মাংসাশী প্রাণীর শিকারের মতো প্রাকৃতিক নিয়ম নয়।যখন কাঁচা মাংস খেত তখন তা আগুনে পুড়িয়ে খেতে হত যা একটা মাংসাশী প্রাণী করে না।আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি জ্ঞান মেধা চেতনা আমাদেরই বেশি।তাই এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রকৃতির নিয়মানুসারে চলে উত্তমটাই গ্রহণ করা উচিত।। ★আবার অনেকেই একটা উদাহরণ খুব বেশি দেয়।তারা বলে,"ধরুন আপনার একটা কানা,বোবা,বধির ভাই আছে আর একটা সুস্থ ভাই আছে।এখন কেউ এসে যদি আপনার প্রতিবন্ধী ভাইটাকে মেরে যায় আর আপনি জর্জ কোর্টে গিয়ে বলেন সে কানা,বোবা,বধির।তাকে মারায় কোন সমস্যা নেই।তাহলে কি সেটা মানাবে?বরং আপনি জর্জকে বলবেন সে যেন দোষীকে আরো বেশি শাস্তি দেয় কারন সে একজন বোবা,কানা,বধির ভাইকে হত্যা করেছে।" উপরোক্ত উদাহরণটি প্রায়ই মানুষ একটা গাছের সাথে তুলনা করে বলে গাছ হল প্রতিবন্ধীর মতো যার আর্তনাদ আমরা শুনতে পাই না।তাই বলে কি গাছের আর্তনাদ নেই? ★উত্তরঃ এর উত্তর মূলত আমি ১ম প্রশ্নের উত্তরেই দিয়েছি। সেখানেই স্পষ্ট হয়েছে যে গাছ ব্যাথা অনুভব করতে পারে না।তবুও এই উদাহরণের ক্ষেত্রে আবারও বলি।মানুষের শ্রবনসীমা হল 20Hz-20,000Hz।অনেকে বলে গাছের আর্তনাদ এর শব্দের উচ্চসীমা 20Hz থেকে এত কম যে আমরা সেটা শুনতে পাই না।যদিও কথাটা হাস্যকর তবুও বলছি।কেউ যদি কোন শব্দ উৎপন্ন করে উচ্চসীমার বা নিম্নসীমার তবে অবশ্যই কোন মাধ্যম ব্যবহার করে যেমন মানুষ শব্দ উৎপন্ন করলে ভোকাল কর্ড থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়।মৌমাছির ডানা থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়।প্রাণীদের মতো গাছের এমন কোন মেকানিজম আছে যা উচ্চ বা নিম্ন যেকোন সীমার শব্দ উৎপন্ন করতে পারে? এবার আসি প্রতিবন্ধীদের সাথে গাছের তুলনা করার ক্ষেত্রে।যারা বোবা,বধির,কানা তাদের এমন প্রতিবন্ধী হতে হলে চোখ,কান,মুখ ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ না থাকলে বা এসবে কোন ত্রুটি থাকলে তাকেই বোবা,কানা,বধির বলে।এবার একটা গাছকে এরূপ প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য তার মুখ,চোখ,কান ইত্যাদি থাকতে হবে।গাছের কি সেসব জানে যে আমরা প্রতিবন্ধীদের সাথে তুলনা করি??যদি নাই থাকে তবে কোন এঙ্গেলে প্রতিবন্ধীদের সাথে তুলনা করা হয়?? এবার যদি কেউ বলে কান,চোখ,মুখ এগুলো ইন্দ্রিয় তবে বলব ইন্দ্রিয় দুই প্রকার।জ্ঞানেন্দ্রিয় আর কর্মেন্দ্রিয়। চোখ,কান,মুখ এগুলো জ্ঞানেন্দ্রিয় নয়।প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এগুলো দ্বারা শুধুমাত্র বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় যা একটা গাছের ক্ষেত্রে চোখ,কান,মুখ ইত্যাদি কিছু যখন নাই ই সুতরাং বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা শব্দই উঠতে পারে না।অর্থাৎ একজন প্রতিবন্ধীর সাথে গাছের তুলনা করে গাছের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো মূর্খামি ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।এগুলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কথাবার্তা। (আরো জানতে বিজ্ঞানী ড্যামিয়েল চ্যামোভিটস এর what a plant knows বইটি পড়ুন) আশা করি যারা এইরূপ প্রশ্ন করে বুঝাতে চায় যে গাছ খাওয়াও পাপ সুতরাং বেঁচে থাকার জন্য সব খাওয়া যায় তাদের কাছে সব খোলাসা হয়েছে।তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত যে, এই প্রশ্নগুলো করে আসলে অজুহাত দেখানোর জন্য মাছ মাংস খাওয়ার সুযোগ করার জন্য। (অনেকেই বলতে পারেন এত যে জ্ঞান দিচ্ছি আমি কি নিজে শাকাহারী? না ভাই আমি শাকাহারী নই,,মাছ মাংস সবই খাই।তবে ঈশ্বরের কৃপা হলে এগুলো দ্রুতই ছেড়ে দিব।আর সবথেকে বড় কথা হল মন থেকে আগে স্বীকার করতে হবে একটা প্রাণীকে হত্যা করে তাকে আহার হিসেবে গ্রহণ করা কখনোই উচিত নয়।আমি এটা মন থেকে স্বীকার করি এবার শুধু বাস্তবায়ন করার পালা।।
👉এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের দুটি ইউটিউব লিংক দেখতে পারেন👇👇
