Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বেদ, পুরানে মূর্তিপূজার বিধান নাই ! তাহলে কেন তোমরা মূর্তি পূজা কর ?

 



👉বৈদিক প্রতিমা শব্দের অর্থ কী?

"প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমা প্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।
প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি রূপমোপমানং স্থাত্।"
                                                          (অমরকোষ, ২/১০/৩৫-৩৬)

অনুবাদঃ— প্রতিমান, প্রতিবিম্ব, প্রতিমা, প্রতিয়াতনা, প্রতিচ্ছায়া, প্রতিকৃতি, অর্চা, প্রতিনিধি- সনাতন ধর্মের বৈদিক অভিধানে এই আট নামই প্রতিমার শব্দ।

                           
   👉মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন—

“দ্যোততে ক্রীড়তে যস্মাদুদ্যতে দ্যোততে দিবি।
তস্মাদ্দেব ইতি প্রোক্তঃ স্তূয়তে সর্ব দেবতৈঃ”।।

অর্থাৎ— যার দ্বারা সৃষ্টি-স্থিতি-লয় একীভূত হয় তাকেই ‘দেব’ নামে অভিহিত করা হয়। আসলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার জন্যে বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া ব্রহ্মেরই মানস ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রহ্মের এই এক এক ধরণের অভিব্যক্তিকে এক একটা ‘দেব’ বলা হয়।

   👉ব্রহ্ম রূপে প্রতিমা

রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।
  (ঋগ্বেদ, ৬/৪৭/১৮)

অনুবাদঃ— “রূপে রূপে প্রতিরূপ (তাহার অনুরূপ) হইয়াছেন, সেই ইহার রূপকে প্রতিখ্যাপনের (জ্ঞাপনের) জন্য ইন্দ্র মায়াসমূহের দ্বারা বহুরূপ প্রাপ্ত হন। যুক্ত আছে ইহার অশ্ব শত দশ (অর্থাৎ সহস্র)৷”

পদার্থঃ— (ইন্দ্রঃ) জীবাত্মা (রূপং-রূপং প্রতিরূপ
বভুব) প্রত্যেক প্রানির রূপে তদাকার হয়ে বিরাজমান
হন। (তত্ অস্য রূপং প্রতি চক্ষনায়) তাহা এই রূপে
আধাত্ম দৃষ্টি দ্বারা দেখায় যোগ্য। এই জীবাত্মা (সায়াভি) নানা বুদ্ধি দ্বারাই (পুরু-রূপঃ ইয়তে) নানা রূপের জানা যায়। (অস্য ইহার শাসনে, দেহ মধ্যেই (দশ শতা হরয়ঃ) দশ শত প্রানগন অশ্ব বা ভূত্যের সমান (যুক্তাঃ) যুক্ত জ্ঞান তন্তু তথা শক্তিতন্তু রূপে কাজ করে।

দ্বে বাব ব্রহ্মণো রূপে মূর্তং চৈবামূর্তং চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।।
            (বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২/৩/১)

অনুবাদঃ— ব্রহ্মের দুইটি রূপ, মূর্ত ও অমূর্ত, মর্ত্য ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সৎ (সত্তাশীল) ও ত্যৎ (অব্যক্ত)।

অগ্নির্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷
একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ৷৷

“অগ্নি যেমন এক হয়েও ভুবনের মধ্যে প্রবেশ করে রুপে রুপে বহুরুপ হয়ে আপনাকে ধরে দিয়েছে, তেমনি সর্বভূতের অন্তরস্থ অন্তরাত্মা এক হয়েও বাহির অবধি ভিন্ন ভিন্ন রুপ গ্রহণ করেছে ৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷৯)

বায়ুর্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷
একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ৷৷

“বায়ু যেমন এক হয়েও ভুবনের মধ্যে প্রবেশ করে রুপে রুপে বহুরুপ হয়ে আপনাকে ধরে দিয়েছে, তেমনি সর্বভূতের অন্তরস্থ অন্তরাত্মা এক হয়েও বাহির অবধি ভিন্ন ভিন্ন রুপ গ্রহণ করেছে৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷১০)
.
“রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷ অয়মত্মা ব্রহ্ম সর্ব্বানুভূঃ৷”

অর্থাৎ তিনি প্রতি বস্তুর রুপ ধারণ করিয়াছেন ৷
এই আত্মাই ব্রহ্ম তিনি সর্ব্বগত ৷
           (বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২৷৫৷১৯)

একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি৷

“একক নিয়ন্তা হয়েও এই সর্বভূতের অন্তরাত্মা একই রুপকে বহুধা করে চলেছে ৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷১২)

“যো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভুব”
           (ঋগ্বেদ, ২৷১২৷৯)
অর্থাৎ— তিনি নিখিলের প্রতিমা হইয়াছিলেন ৷

সুতরাং এখানে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরের তুল্য না থাকলেও তিনি সকলের তুল্য থাকতে পারেন।

ত্বং হি নঃ পিতা বসো ত্বং মাতা শতক্রতে বভূবিথ অধাতে সুম্নমীমহে!

পদার্থঃ— তিনি (বসো শতুত্রুতো) সব জায়গায় নিবাস করেন এবং সবকিছু সৎকৃত জ্ঞানে ঈশ্বর!

পদার্থঃ— (ত্বং হি নঃ পিতা) তুমিই আমাদের সত্যকারের পিতা (সৃষ্টিকর্তা) ত্বং, তুমিই মাতা (ধারক)! (অধা)এই জন্য আমাদের সবার (তে) তোমার (সম্নং) উত্তম মনন এবং ভাবনা করা উচিৎ! অতঃ আমরা আপনার থেকে মঙ্গল করি!

এখানে মন্ত্রের ইন্দ্র শব্দে Pro. Wilon, Griffith তথা অনান্যরা ইন্দ্র শব্দে God এবং মায়া অর্থে illusion করেছে। নিঘন্টু ৩।৯ অনুসারে "মায়া ইতি প্রজ্ঞানাম্"। এবং পাণিনী অনুসারে ইন্দ্র শব্দের অর্থ হচ্ছে জীবাত্মা।

"ইন্দ্রিয়মিন্দ্রলিঙ্গ­ মিন্দৃষ্টমিন্দ্র সৃষ্ট মন্দ্র জুষ্ট মিন্দ্রদত্তমিতি।  (অষ্টাধ্যায়ী, ৫।২।৯৩)

অর্থাৎ— (ইন্দ্রয়ম্) ইন্দ্রয়ম এই শব্দ নিপাতন করা যায়, (ইন্দ্রলি দত্তমিতি) ইন্দ্র লিঙ্গাদি দ্বারা (বা) বিকল্প দ্বারা। ষষ্ঠ সমর্থ ইন্দ্রশব্দ দ্বারা ঘচ্ প্রত্যয়ের নিপাতন করা উচিৎ। উদাহরণ ইন্দ্রস্য লিঙ্গ ইন্দ্রিয়ম, এখানে ইন্দ্র নাম জীবাত্মা, তথা লিঙ্গ নাম চিহ্নের জীবাত্মা চিহ্ন ইন্দ্রিয় বলে।


নূ মর্তো দয়তে সনিষ্যন্যো বিষ্ণব উরুগায়ায় দাশৎ। প্র যঃ সত্রাচা মনসা যজাত এতাবন্তং নর্যমাবিবাসাৎ।।(ঋগ্বেদ ৭/১০০/১) অর্থাৎঃ- "যিনি বহুলোকের কীর্তনীয়া শ্রীবিষ্ণুকে হব্য দান করেন, যিনি যুগপৎ স্তোত্র উচ্চারণের দ্বারা তাঁর পূজা করেন এবং মনুষ্যগণের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন, তিনি মর্ত্যধন ইচ্ছা করে শীঘ্র প্রাপ্ত হন।"

যদি বিগ্রহ নির্মাণ শাস্ত্র অনুমোদিত না হতো, তবে এখানে পূজা পরিচর্যার প্রসঙ্গই আসতো না।কেনো পরিচর্যা শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।পরিচর্যা শব্দের অর্থ হয় আরাধনা, উপসনা, পূজা,সেবা, শুশ্রূষা করা।কেনো না এখানে ভগবান বিষ্ণুকে পূজা,সেবা, শুশ্রূষা করার কথা বলা হয়েছে। তো ভগবানের বিগ্রহ যদি না হয় তবে কি করে এসব হবে।অতএব বেদে ভগবানের বিগ্রহ পূজা স্বীকৃত।

বিগ্রহ সেবা প্রসঙ্গে শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ স্কন্ধে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ভগবান বলছেন যে, "ব্রাহ্মণের উচিত নিস্কপটে প্রেম ও ভক্তিযুক্তভাবে উপযুক্ত উপকরণের মাধ্যমে উপাসকের হৃদয়ে উদিত আমার শ্রীবিগ্রহকে ইষ্টদেবতারূপে আরাধনা করা।

"শৈলী দারুময়ী লৌহী লৌপ্যা
লৌখ্যা চ সৈকৈতী।মনোময়ি মনিময়িঃ প্রতিমাষ্টবিধা স্মৃত।।"
সরলার্থ - শিলা (পাথর),দারু( কাঠ), সুর্বণাদি ধাতু (লৌহি), লৌপ্যা(মাটি), লৌখ্যা (চিত্র),বালুকা,মন ও মনি এই অষ্ট প্রকারে ভক্ত আমার মূর্তি বা বিগ্রহ নির্মান করলে, আমি সেখানে প্রকাশিত হই।
-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে,
শ্রীমদ্ভাগবত পুরানঃ ১১/২৭/১২

এ অধ্যায় ২৪ নং শ্লোকে ভগবান বললেন, "উপযুক্ত মন্ত্রোচ্চারণ এবং শ্রীবিগ্রহের অঙ্গন্যাসের মাধ্যমে পরমাত্মাকে বিগ্রহের মধ্যে আহ্বান করে ভক্তের উচিত আমার আরধনা করা।"

👉পদ্মপুরাণে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অর্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধী...বিষ্ণৌ সর্বেশ্বরেশে তদিতরসমধীর্যস্য বা নারকী সঃ|| অর্থাৎ, যে ব্যক্তি মন্দিরে অবস্থিত ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে কাঠ--পাথর মনে করে, সে নারকী অর্থাৎ সে নরকে বাস করছে

তাছাড়া ভগবান কৃষ্ণও গীতা বলেছেন যে সাকার উপাসনাকারী ভক্তরাই হলো শ্রেষ্ঠ।তারা নিরাকার উপাসনায় কেবল দুঃখই লাভ হয়। ভগবান উবাচ ময্যাবেশ্য মনো যে মাং নিত্যযুক্তা উপাসতে৷ শ্রদ্ধয়া পরয়োপেতাস্তে মে যুক্ততমা মতাঃ৷৷(গীতা১২/২)

ক্লেশোধিকতরস্তেষামব্যক্তাসক্তচেতসাম্৷ অব্যক্তা হি গতির্দুঃখং দেহবদ্ভিরবাপ্যতে৷৷(গীতা১২/৫)

👉আরো বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন 👇👇