Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গো হত্যা নিষিদ্ধ (পর্ব-৩)


👉অনেক বিধর্মী এবং অপপ্রচার কারীরা বেদে গো হত্যা এর কথা বলে এবং তারা অপপ্রচার ও করে বিভিন্ন ভাবে। অনেক সময় তারা বেদ পুরান এবং ইতিহাস ইত্যাদি এর প্রমান দেয়।

কিছু ভাষ্যকার সংস্কৃত শব্দের সঠিক অর্থ  উপলব্ধি করতে না পেরে শাস্ত্রে অনেক ভুল ব্যাখা করেছেন।বিধর্মীর মূল উদ্দেশ্য এই সব ভুল ব্যাখার  প্রয়োগ করে সনাতনীদের সংশয়ে ফেলা।এবং ধর্মান্তরের মত ঘৃণিত কাজে  প্রলুব্ধ করা।

আমরা জানি বেদে পরস্পর বিরোধি কোন কথা নেই।বেদ বিরোধি কোন বিকৃত রেফারেন্স গ্রহন যোগ্য না।

👉এখানে তাদের গো হত্যা অপপ্রচার এর জন্য বেদ, ইতিহাস, স্মৃতিশাস্ত্র, এমনকি পুরাণ থেকেও দেখব গো হত্যা ব্যাপার এ কি বলে।

বেদে স্পষ্ট করে গো হত্যা নিষেধ আছে।

👉বেদের গোহত্যা ও গোমাংস ভক্ষণের নিষেধাজ্ঞা সমূহ →

✋"ইমং মা হিংসীদ্বিপাদ পশু সহস্রাক্ষ মেধায় চীয়মান।"
(যজুর্বেদ ১১।৪৭)

---- হে সহস্র প্রকার দৃষ্টি যুক্ত রাজন! সুখ প্রাপ্ত করানোর জন্য নিরন্তর বৃদ্ধিশীল এই দ্বিপদী মনুষ্য এবং পশুকে হত্যা করো না।

✋"প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করো না।

✋"যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।"
(অথর্বেদ ১।১৬।৪)
--- যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর, যদি অশ্বকে, যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।

✋"অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী"
(অথর্ববেদ ১০।১।২৯)
--- নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না।

✋"গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম"
(যজুর্বেদ ৩০।১৮)
--- গাভীর ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী যে, ক্ষুধার জন্য গাভীকে হত্যা করে। তাকে ছেদন করি।

✋" অদিতিম মা হিংসী"
(যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
--- হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।

✋" মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।

✋"অঘ্না ইব"
---গাভী সমূহ বধের অযোগ্য। (যজুঃ ৬।১১)
পশুদের রক্ষা করো তাদের পালন করো।।

✋দশস্যন্তো নো মরুতো মৃল়ন্তু বরিবস্যন্তো রোদসী সুমেকে ।
আরে গোহা নৃহা বধো বো অস্তু সুম্নেভিরস্মে বসবো নমধ্বম্
ঋগ্বেদ ৭.৫৬.১৭

---গো ও মনুষ্যাদি হত্যা সমতূল্য -

✋অনডুদ্ভ্যস্ত্বং প্রথমং ধেনুভ্যস্ত্বমরুন্ধতি ।
অধেনবে বয়সে শর্ম যচ্ছ চতুষ্পদে ॥
অথর্ববেদ ৬.৫৯.১

- ক্ষুধা তথা খাদ্যের জন্য যারা গো হত্যা করে তাদের দূর করো

- গো আদি পশু কখনো হত্যার যোগ্য নয়


✋দ্বিপাদব চতুষ্পাৎ পাহি
যজুর্বেদ ১৪।৮
-
দ্বিপদী [মনুষ্য ও পক্ষী আদি ] ও চতুষ্পদী [ অশ্ব, গো,মহিষাদি ] উভয়ের রক্ষা করো ।
অনেকেই বলতে পারেন পশু অর্থ বা পশু শব্দে কি কি বোঝায় ।

✋তবেমে পঞ্চ পশবো বিভক্তা গাবো অশ্বাঃ পুরুষা অজাবয়ঃ
অথর্ববেদ ১১.২.৯
- পঞ্চ প্রকার পশু গোসমূহ, অশ্ব , মনুষ্য , ছাগ ও ভেড়া ।

✋স এতান্পঞ্চ পশূনপশ্যৎ । পুরুষমশ্বং গামবিমজং যদপশ্যত্তস্মাদেতে পশবঃ
শতপথ ব্রাহ্মণ ৬.২.১.২

সুতরাং দেখা যাচ্ছে জীব বা পশুর মধ্যে মনুষ্যও রয়েছে । আবার মন্ত্রে গাবো উল্লেখ রয়েছে যার অর্থ কিনা মহিষাদি সকল গোরূপ প্রাণী ।

👉ব্রাম্মন শাস্ত্রে তে গো মাতা নিয়ে তথ্য

হে গৃহপত্নী ! সর্ব প্রথমে তুমি ষাঁড়, গোরু, বাছুর ও অন্য চতুষ্পদের জন্য শালা বা ঘর নির্মাণ করে দাও৷
স ধেন্বৈ চানডুহশ্চ নাশ্নীয়াদ্ধেন্বনডুহৌ বা ইদং সর্বং বিভৃতস্তে দেবা
শতপথ ব্রাহ্মণ ৩.১.২.২১

👉মহাভারতে গো মাংস, মদ ইত্যাদি নিষেধ

✋সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম
ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ বেদেষু কল্পিতম

→ সুরা মৎস মাংস তালরস এই সব বস্তু কে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসবের উপযোগের বিধান নেই।
শান্তি পর্ব পৃ ২৬৫ :শ্লোক ৯

✋ অব্য বস্থিতমর্য দৈবিমূঢর্নাস্তি কৈর্তবৈ।
সংশয়াত্নাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।

→ যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মুর্খ নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয় যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এই রুপ লোকই এইরুপ লোকই হিংসা কে সমর্থন করে।
শান্তি পর্ব : পৃ ২৬৫ শ্লোক

✋মানান্নোহাচ্চ লোভাচ্চ লৌল্যমেত্যপ্রকল্পিতম

→ সেই ধূর্তেরা অভিমান লোভ এবং মোহ বংশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে।
শান্তি পর্ব : পৃ ২৬৫ শ্লোক ১০

পুরান শাস্ত্রে গো হত্যা নিষিদ্ধ

 👉ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ

✋অশ্বমেধং গবালম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকম্।

দেবরেণ সুতোৎপত্তিং কলৌ পঞ্চ বিবর্জয়েৎ।। (১১১)
অর্থাৎ- অশ্বমেধ, বৈধ গোবধ, সন্ন্যাস ক্ষেত্রজাদি পুত্রের করণ এবং দেবরদ্বারা পুত্রোৎপাদন কলিকালে এই পাঁচটি কার্য নিষিদ্ধ।

( অনুবাদক- পঞ্চানন তর্করত্ন; নবভারত পাবলিশার্স)

👉অগ্নিপুরাণ

অগ্নিপুরাণের ১৬৮ অধ্যায় অধ্যায়ে গোমাংস খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলা হয়েছে –

✋গো-নরাশ্ব-খরোষ্ট্রাণাং ছত্রাকং গ্রাম্যকুক্কুটম্। ।

মাংসং জগ্ধা কুঞ্জরস্য তপ্তকৃচ্ছ্রেণ শুধ্যতি।

অর্থঃ গো, নর, অশ্ব, উষ্ট্র, গ্রাম্য কুক্কুট ও হস্তী ইহাদের মাংসাদি ভক্ষণ করিলে তপ্ত কৃচ্ছ্রের অনুষ্ঠান দ্বারা শুদ্ধি লাভ হইয়া থাকে।

👉মহানির্বাণ তন্ত্র

মহানির্বাণ তন্ত্রের ১১ উল্লাসের ১২৫ নং শ্লোকে গোমাংস খেলে উপবাস করে শুদ্ধ হতে বলা হয়েছে-

✋ভুঞ্জানো মানবং মাংসং গোমাংসং জ্ঞানত শিবে

উপোষ্য পক্ষং শুদ্ধঃ স্যাৎ প্রায়শ্চিত্তমিদং স্মৃতম্।।

অর্থঃ হে শিবে! যদি কোনো ব্যক্তি জ্ঞান পূর্বক মনুষ্য মাংস বা গোমাংস ভক্ষণ করে তাহা হইলে একপক্ষ উপবাস করিয়া সে ব্যক্তি শুদ্ধ হইবে- এই তাহার প্রায়শ্চিত্ত।

[ কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন কর্তৃক অনুবাদিত; প্রকাশকঃ উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়]

মনুসংহিতা তে গো হত্যা নিষেধ

✋পরিত্যজেদর্থকামৌ যৌ স্যাতাং ধর্মবর্জিতৌ।

ধর্মঞ্চাপ্যসুখোদর্কং লোকবিক্রুষ্টমেব চ।।

অর্থ- “ ধর্মবিরুদ্ধ অর্থ ও কামনা ত্যাগ করবেন। চুরি করেও অর্থোপার্জন ঘটে; কিন্তু তা ধর্মবিরুদ্ধ হওয়ায় ত্যাগ করবেন। যেরূপ ধর্ম আচরণ করলে পরিশেষে দুঃখ পেতে হয় এমন ধর্ম আচরণ করবেন না। যেমন, যে ব্যক্তির বহু পুত্র আছে তার কখনোই সর্বস্ব দান করা উচিত নয়। উপরন্তু যে প্রকার ধর্মাচরণে লোকে নিন্দা করে অথবা লোকের আক্রোশ ভাজন হতে হয় এমন ধর্ম আচরণ করবেন না। যেমন, কলিযুগে অষ্টকা প্রভৃতি শ্রাদ্ধে কখনোও গোবধ করবেন না।“ [ মনু ৪/১৭৬; অনুবাদক- চৈতালী দত্ত ; কুল্লুক ভট্টের টীকা দেখুন]

👉সংবর্ত সংহিতা তে গো হত্যা পরিণতি

সংবর্ত সংহিতার ১৯৫ তম শ্লোকে বলা হয়েছে-

✋গোমাংসং মানুষঞ্চৈব শুনো হস্তাৎ সমাহিতম্।

অভক্ষ্যমেতৎ সর্ব্বন্তু ভুক্ত্বা চান্দ্রায়ণং চরেৎ।।

অর্থঃ গোমাংস, মনুষ্যের মাংস এবং কুক্কুরের হস্ত হইতে আহৃত যে দ্রব্য এ সকল অভক্ষণীয় , ইহা ভক্ষণ করিয়া চান্দ্রায়ণ ব্রত করিবে। (অনুবাদক- পঞ্চানন তর্ক রত্ন)

👉গৌতম সংহিতা

যুদ্ধকালে প্রাণীহিংসার জন্য পাপ নাই কিন্তু হতাশ্ব , হরসারথী, ছিন্নায়ুধ, কৃতাঞ্জলি, আলুলায়িত কেশে পরাঙ্মুখ হইয়া উপবিষ্ট এবং বৃক্ষাদিরূঢ় শত্রু ও দূত, গো, ব্রাহ্মণ এবং বন্দী ইহাদিগকে বধ করিলে রাজা পাপী হন। ( দশম অধ্যায়)

👉বিষ্ণু সংহিতা

বিষ্ণু সংহিতার ৫১ অধ্যায়ে গোমাংস খেলে প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেওয়া হয়েছে –

“সুরাপায়ী ব্যক্তি যজন যাজনাদি সর্ব কর্ম বর্জিত হইয়া একবর্ষ কণামাত্র ভোজন করিয়া থাকিবে। মল মদ্য এ সকলের অন্যতম ভোজনে চন্দ্রায়ন করিবে। লশুন, পলাগু, গৃঞ্জন, এতদ্গন্ধি (অর্থাৎ লশুনাদি গন্ধযুক্ত দ্রব্য), বিড়বরাহ, গ্রাম্য কুক্কুট, বানর এবং গো (এতদন্যতমের) মাংস ভোজনেও ঐ প্রায়শ্চিত্ত।“ ১-৪ ( অনুবাদক- পঞ্চানন তর্ক রত্ন)

👉পরাশর সংহিতা

পরাশর সংহিতার একাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে-

✋অমেধ্যরেতো গোমাংসং চণ্ডালান্নমথাপি বা ।

যদি ভুক্তন্তু বিপ্রেণ কৃচ্ছ্র চান্দ্রায়ণং চরেৎ।। ১

তথৈব ক্ষত্রিয়ো বৈশ্যস্তদর্দ্ধ্ন্তু সমাচরেৎ।

শূদ্রোহপ্যেবং যদা ভুঙ্ক্তে প্রাজাপত্যং সমাচরেৎ।। ২

অর্থাৎ, বিপ্র যদি অপবিত্ররেতঃ, গোমাংস কিংবা চণ্ডালান্ন ভোজন করেন, তবে কৃচ্ছ্র চান্দ্রায়ণ ব্রত আচরণ করিবেন। সেই অবস্থায় ক্ষত্রিয় বৈশ্য ইহারা অর্ধেক ব্রত আচরণ করিবেন। আর শূদ্র যদি উল্লিখিত দ্রব্য ভোজন করে , তবে তাহাকে প্রাজাপত্য ব্রত আচরণ করিতে হইবে। শূদ্র পঞ্চগব্য ভোজন করিবে, দ্বিজ ব্রহ্মকুর্চ্চ পান করিবে এবং ব্রাহ্মণ একটি গাভী, ক্ষত্রিয় দুইটি গাভী, বৈশ্য তিনটি গাভী এবং শূদ্র চারটি গাভী দান করিবে। (অনুবাদক- পঞ্চানন তর্ক রত্ন)

👉বৃহস্পতি সংহিতা

বৃহস্পতি সংহিতায় বলা হয়েছে-

“যে ব্যক্তি ব্রহ্মহত্যাকারী, স্ত্রীহত্যাকারী, পিতৃমাতৃহত্যাকারী, শতসহস্র গোহত্যাকারী এবং যে ব্যক্তি স্বীয় দত্ত কিংবা পরদত্ত ভূমি হরণ করে , সে বিষ্ঠাতে কৃমি হইয়া পিতৃগণের সহিত পচিয়া মরে।“ (২৭-২৮ শ্লোক)

👉অত্রি সংহিতা

অত্রি সংহিতার একটি স্থানে দেখা যায় গোমাংস ভক্ষণকে ভালো চোখে দেখা হত না-

“দ্বিজ অষ্টশল্যাগত ( অর্থাৎ অষ্টাঙ্গে শল্যবিদ্ধ) হইয়াও অঞ্জলিপুটে জলপান করিলে , ঐ জলপান- সুরাপান ও গোমাংসভক্ষণের তুল্য। “ (৩৮১ শ্লোক)

👉আরেকটি স্থানে গোমাংস ভক্ষণের প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেওয়া হয়েছে-

“কাষ্ঠ, লোষ্ট্র বা শিলা দ্বারা গোহত্যা করিলে সান্তপন ব্রত, মৃত্তিকা দ্বারা করিলে প্রাজাপত্য , লৌহদণ্ড দ্বারা করিলে অতিকৃচ্ছ্র করিবে।প্রায়শ্চিত্ত সম্পন্ন হইলে ব্রাহ্মণভোজন করাইবে এবং একটি সবৃষ গাভী পুরোহিতকে দক্ষিণা দেবে। “ ( ২১৯-২২১ শ্লোক)

এমন অনেক প্রমাণ আছে, যেখানে গোহত্যা নিষিদ্ধ।।।

👉নিচে পবিত্র বেদে গো হত্যা নিষেধের বেদ থেকে পদার্থ সহ কিছু বই থেকে পিক দেওয়া হল, দেখে নিবেন👇👇