Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

একাদশী কী এবং কেন একাদশী পালন করতে হয়?

 


✋জ্ঞাণীরা উপবাস ব্রত দ্বারা পরমেশ্বরকে জানার ইচ্ছা করেন

🔴( বৃহদারণ্যক ঊপনিষদ ৪/৪/২২)🔴 ✋গ্রাম্য ব্রীহি প্রভৃতির ভোজন বর্জন করে উপবাস করবে। উপবাস করে যজ্ঞাদি করলে পিতৃগণ তুষ্ট হন।উপবাসে ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।যদি ক্ষুধা অসহনীয় হয় তবে জলপান করবে। জলপানে ভোজন হয়, আবার হয়না।যজ্ঞ বজ্রসদৃশ, ক্ষুধা মানুষের শত্রু। না খেয়ে উপবাস করলে যজ্ঞরূপ বজ্র তার ক্ষুধারূপ শত্রুকে বিনাশ করে। -🔴[কৃষ্ণযজুর্বেদ, ১/৬/১৫]🔴

👉একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন,
হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।
মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-
সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্হাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গণ্ডলি বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হল।
পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাছ-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর- আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-;শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই ঊরু-ণ্ডরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-ণ্ডপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক।
এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দু্খঃ মোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন।
একদিন গরুড় পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের, মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য ইত্যাদি দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন।
যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন?
যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের ,পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযন্ত্রনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন- আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্ম দোষে দুষ্ট হয়ে নরক যান্ত্রণা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যাবস্হা করব।
ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল।
শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।
কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপ পুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থণা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনূযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকূণ্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।
হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকূণ্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন?
পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জলত-স্হল, বনপ্রান্তর, পর্বত-সমূদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্ত একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্হান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্হান প্রদান করুন।
পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন-হে -পাপপুরুষ!
তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে বির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে, তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।
👉একাদশী ব্রতের ফলঃ
★সকল পুরাণে মুনিদিগের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
★শ্রীযমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মন! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। (পদ্মপুরাণ)
★একাদশীতে যে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত¡, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
★যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।
★বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রলয়কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পঁচে মরতে হয়। (শারদীয় পুরাণ)
★হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। (অগ্নিপুরাণ)
★বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে,তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। (কাত্যায়ন সংহিতা)
★যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপসনা করেন, তার হাতের মহামূল্যবান রত্নপরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। (তত্ত্বসাগর)
★দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবীকে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরিবাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ্ণ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে।(স্কন্দপুরাণ)
এছাড়াও বিষ্ণুস্মৃতির ৪৯ অধ্যায়ের ১-৪ নং শ্লোক বা বিষ্ণুসংহিতা ৪৯/১-৪) স্পষ্টভাবেই একাদশীর কথা উল্লেখ রয়েছে।
একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সব কিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের সেই বিষ্ণুর প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে।
একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করেছিলেন। (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা ১৫/৮-১০)
অনেকের ধারনা শ্রীপুরীধামে শ্রীজগন্নাথদেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।
★☞একাদশী ব্রত পালনের নিয়মঃ
সামর্থ্য অনুযায়ী দশমী তে একাহার, একাদশী তে নিরাহার, দ্বাদশীতে একাহার। এতে অসমর্থ হলে শুধু একাদশীতে অনাহার।
যদি এতেও অসমর্থ হয়, একাদশী তে পঞ্চ শস্য বর্জনীয়, ফলমূল ও কিছু সবজি গ্রহনের বিধান আছে।
যেমন-গোল আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়া, চালকুমড়া, বাদাম তেল/সূর্যমুখি তেল/ঘি দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উতসর্গ করে আহার করা যেতে পারে। এছাড়া দুধ, কলা, আপেল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, শসা, নারকেল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফল আহার করা যাবে।
একাদশীর পারন সময় পঞ্জিকাতে দেয়া থাকে, ভগবান কে অন্ন নিবেদন করে সেই প্রসাদ নিদিষ্ট সময়ে গ্রহন করতে হবে। নতুবা একাদশীর ফল লাভ হয়না।
★☞বর্জনীয় পঞ্চ রবি শস্য-
★ধান জাতীয় খাদ্য- ভাত, খিচুড়ি, মুড়ি, চিঁড়া, খই, সুজি, চালের গুঁড়া, চালের পিঠা, পায়েস।
★গম জাতীয় খাদ্য- আটা, ময়দা, সুজি, রুটি, বিস্কুট, কেক,নুডলস।
★যব বা ভুট্টা জাতীয় খাদ্য- ছাতু, খই, রুটি।
★ডাল জাতীয় খাদ্য- মুগ, মশুর, মটর, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর, বরবটি, শিম, বুট।
সরিষা তেল, তিলের তেল, সয়াবিন তেল
চা, বিড়ি, সিগারেট,পান, যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জনীয়।
একাদশী তে সহবাস সম্পূর্ণ বর্জন।
আমিষ (পিঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ, মাংস) ভক্ষন সম্পূর্ণ নিষেধ।

👉একাদশীর পারন মন্ত্র

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।

– এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পালন করতে হয়।

👉বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন--👇👇

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6%E0%A7%80?fbclid=IwAR0wCPdbpytr0ypFhEWb6SnwZlTW0yNtz-1qgv7pvvl7yJ5FhJoKaEDVetE

https://www.youtube.com/watch?v=qtCQRRQB-3E