👉পবিত্র বেদ কি বলে ব্রাহ্মণ সম্পর্কে
👉ব্রাহ্মণ বলতে কি বুঝায়? ও কাদেরকে আমরা ব্রাহ্মণ বলতে পারি ? ব্রাহ্মণ হতে কি বংশ পরম্পরায় ব্রাহ্মণ হতে হবে, না যোগ্যতা থাকলে যে কেউ ব্রাহ্মণ হতে পারবে?
👉ব্রাহ্মণ সম্পর্কে সনাতন ধর্মের পবিত্র বেদ কি বলে:-
"যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস,সত্য,নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল,জ্ঞান প্রচারকারী, ধর্মজ্ঞানী সে ব্রাহ্মন"
-(ঋগবেদ ৭.১০৩.৮)
তাহলে যে কোনো শূদ্র, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় যাদের উক্ত গুন গুলো থাকবে সেই ব্রাহ্মন হবে। সুতরাং একটা মানুষ যে কাস্টের হোক না কেন উক্ত গুন গুলো থাকলে সেই ব্রাহ্মন হবে ও ঠাকুর পূজা করার অধিকার পাবে।
👉এই তথ্য নিয়ে বৈদিক ইতিহাসে যেসকল মহাপুরুষ যোগ্যতার বলে ব্রাহ্মণ পদবীতে অধিষ্ঠিত হয়েছেন :-
১. ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে । কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন।এরপর তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। -(ঐতরেয়া ব্রহ্মন ২.১৯ )
২. সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন।
৩. ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন। -(বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)
৪. হরি ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও।-(বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)
৫. শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়।-(বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১)
৬. মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।
৭. বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন ।
৮.মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বা
ব্যাস দেব- যার মাতা একজন জেলে ছিল।
৯.মহর্ষি বাল্মিকি-(রামায়ণের)
রচয়িতা। যিনি একজন নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিলেন।
১০. মহর্ষি ঐতরেয়- (ঐতরেয় উপনিষদের)
রচয়িতা যার মা শুদ্র ছিলেন।
১১.মহর্ষি পরাশর- যার পিতা চন্ডাল(শুদ্রের মধ্যে সর্বনিম্ন) ছিলেন।
১২. মহর্ষি বশিষ্ঠ মুনি- যার মাতা পতিতা ছিলেন।
১৩.মহর্ষি বিশ্বামিত্র - ক্ষত্রিয় ছিলেন।
১৪.কোশিক মুণি- শুদ্রজাত।
১৫. মহর্ষি শঙ্করাচার্যের গুরু একজন পতিত/দলিত সম্প্রদায়ের ছিলেন।
.
এদেরকে হিন্দু শাস্ত্র ব্রাহ্মণের
উপাধি দিয়েছে।
বেদজ্ঞান, শাস্ত্রজ্ঞান না থাকা
সত্ত্বেও আপনারা নিজেদের
কীভাবে ব্রাহ্মণ দাবী করেন??
.
উচ্চ বর্ণের হিন্দুকেও নিম্ন বর্ণে
পতিত হতে হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ-
স্বয়ং ভগবান শ্রীরামের বংশধর
রাজা রঘুর পুত্র প্রবিধ, যে ব্রাহ্মণ
বা ক্ষত্রিয়তুল্য গুণ না থাকায়
তাকে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরূপে
ঘোষণা করা হয়।
আর অস্পৃশ্যতা বা অন্ন পাপ বলে যা
প্রচার করেন তা করে আপনারা
স্বয়ং ভগবান শ্রীরামের অপমান
করেন। শ্রীরামের বন্ধু ছিলেন গুহক
চন্ডাল। শ্রীরাম শুদ্র নারীভক্ত
শবরীর মুখ দিয়ে চেখে দেখা
উচ্ছিষ্ট ফল পর্যন্ত খেয়েছিলেন।
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।
যে কোন হিন্দু বেদ জ্ঞানী এবং শ্রাস্রজ্ঞানী হয়ে ব্রম্মজ্ঞান লাভ করলেই সে ব্রাম্মন হতে পারে
হোক সে যে কোন সম্প্রদায়ের।
👉 শ্রীমদভগবদগীতাকে পঞ্চম বেদ বলায় এবার দেখা যাক শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে ব্রাহ্মণ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে :-
দ্বাপর যুগে শ্রী কৃষ্ণ শ্রী গীতায় Cast System কে আরো সহজ করে তুলে ধরেছেন
শ্রীমদভগবদগীতা ১৮.৪১
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ।।
“হে পরন্তপ!স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে”
এখানে স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, ও শূদ্র অর্থ্যাৎ এখানে স্বভাবজাত গুণ বলতে যোগ্যতাকে বোঝানো হয়েছে বংশ পরম্পরায়কে নয়,
তাহলে এই বিষয়েটি আমরা সবাই মানতে বাধ্য শুধু ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম নিলেও ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না যেখানে যোগ্যতাই হচ্ছে মানুষের কর্মের মাপকাঠি।
👉তবে প্রাচীন কালে যোগ্যতার জন্য সময় সময় পরিবর্তন হতো পদবী গুলো। যার জন্য একশ্রেনী এই পরিবর্তনের রীতিকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এবং বংশ পরম্পরায় নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এখানে বংশ পরম্পরায়নীতিকে হিন্দু সাম্রাজ্যের উচ্চ পদবীকে ১০০% কোটায় নিয়ে গেছেন। যার জন্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কখনও ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্রদের ছেলে উচ্চ পদস্থ হতে পারতো না,এবং এই বর্ণবৈষম্য ও ধর্মীয়শিক্ষা সহ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা বৈষম্য মুল্যক আচরণই হিন্দু সাম্রাজ্যের কাঠামো ভেঙে যাওয়ার প্রধান কারণ।
শ্রীমদভগবদগীতা ১৮.৪২
শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম।।
“শম, দম, তপ, শৌচ,ক্ষান্তি, সরলতা,জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য এগুলি ব্রাহ্মনদের স্বভাবজাত কর্ম”
শম=অন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম
দম=বহিরিন্দ্রিয়ের সংযম
তপ= তপস্যা
শৌচ= শুচিতা
ক্ষান্তি=সহিষ্ণুতা
জ্ঞান=শাস্ত্রীয় জ্ঞান
বিজ্ঞান=তত্ত্ব উপলগ্ধি
আস্তিক্য= ধর্মপরায়ণতা
✋শ্রীমদভগবদগীতা ১৬.৬ তে শ্রী কৃষ্ণ বলছেন -
"দেবস্বভাব ও অসুরস্বভাব এই দুই প্রকার মানুষ সৃস্টি হয়েছে। যার হৃদয়ে দৈবী সম্পদ কার্য করে তিনি দেবস্বভাব এর মানুষ ও যার হৃদয়ে আসুরী সম্পদ কার্য করে তিনি অসুরস্বভাব এর মানুষ।আর তৃতীয় কোন জাতি সৃস্টিতে নেই।"
আবার ভগবত গীতাতে ৯.৩৩ তে শ্রী কৃষ্ণ বলছেন -
"যে সুখরহিত, ক্ষণভঙ্গুর কিন্তু দুর্লভ মনুষ্য দেহলাভ করেছে সেই যজ্ঞ(এখানে পূজা অর্থে)করার জন্য উপযুক্ত"
সুতরাং হোক সে দেবস্বভাব বা অসুরস্বভাব ঠাকুর পূজা করার অধিকার সকল মানুষের আছে, শুধু সেই কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মরত গুন থাকা চাই।তাই ব্রাহ্মন ঘরে জন্মালে, একটা নামাবলী গায়ে দিয়ে, একটা পৈত্যা পড়ে নিলাম, মাথাই একটা তিলক নিলেয়, আমি ব্রাহ্মন হবো এই ধারণা ১০০% ভুল। যদি আমার কাছে উক্ত কর্মরত গুন গুলো না থাকে তাহলে আমি জীবনেও ব্রাহ্মন হতে পারবো না।

