👉কিভাবে রাম সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব কি সৃষ্টিকতার কর্ম? যদি রাম সৃষ্টিকর্তাই হন কেন তিনি হনুমানের সাহায্য চাইবেন? তাহলে কি সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কমতি আছে?
শ্রী রাম হচ্ছে ঈশ্বরের ৭ম অবতার।তিনি মানুষ রুপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেছিলেন। সুতরাং মানুষের মত কাজকর্ম রাম করেছিলেন কারন তিনি মানুষ কিন্তু ঈশ্বরের অবতার। শ্রীমদভগবত গীতায় ভগবান বলেছেনঃ
অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্৷ প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া৷৷ (৪:৬) অর্থ: যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা আমার আদি চিন্ময় রুপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত৷ অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্৷৷(৪:৭) অর্থ: হে ভারত, যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হয়।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্৷ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে৷৷(৪:৮) অর্থ: সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুস্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
জন্মকর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ৷ ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোর্জুন৷৷(৪:৯) অর্থ: হে অর্জুন, যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ ভাবে জানেন তাকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্ম গ্রহণ করতে হয় না তিনি আমার নিত্যধাম লাভ করেন
অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্৷
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্৷৷ (৯:১১)
আমি যখন মানুষ রুপে অবতীর্ন হই,মুর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত হন না, এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।।
অর্থাৎ ভগবান মানুষরুপে পৃথিবীতে অবতীর্ন হতে পারেন।
শ্রীরাম মানুষরুপে অবতীর্ণ হয়েছেন তাই মানুষের মতো বেচে ছিলেন এই ধরাধামে, এতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই জ্ঞানপাপীগণ।
👉রাবন যদি শয়তান হয়ে একদিনে লঙ্কায় পৌঁছাতে পারে তবে রাম সৃষ্টিকর্তা হয়ে কেন ১২ বছর লাগলো তাও আবার হনুমানের সাহায্যে? শয়তানের শক্তি সৃষ্টির্কতা হতে কি করে বেশি হওয়া সম্ভব?
শ্রীরাম সমুদ্র পার হয়েছেন সমগ্র বানর সেনা নিয়ে। বানর সেনারা শ্রীরামকে সহায়তা করতে চেয়েছিল, আর ভগবান সর্বদা ভক্তদের অভিলাষ পূরণ করেন সেটা আর নতুন কিসের???
আর সমুদ্র পার হতে ১২ বছর লাগেনি। শ্রীরাম ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিল----
বাল্মীকি রামায়ণ-- অযোধ্যা কান্ড, ১১তম সর্গের ২৬ তম শ্লোকে কৈকয়ী দশরথকে বলেছেন " "Rama has to take refuge in the forest of Dandaka for fourteen years and let him become an ascetic wearing rags, deer skin and matted hair"
এখানে স্পষ্ট ক্লিয়ার শ্রীরামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে পাঠানোর জন্য বলতেছে"।
এবং অযোধ্যা কান্ডের,১৯ তম সর্গের, ২নং শ্লোকে শ্রীরাম বলতেছেন---
एवम् अस्तु गमिष्यामि वनम् वस्तुम् अहम् तु अतः |
जटा चीर धरः राज्ञः प्रतिज्ञाम् अनुपालयन् || २-१९-२
.
Translation --- "Let it be, as you said it. I shall fulfil the king's promise, go to the forest from here to reside there, wearing braided hair and covered with a hide."
.
অর্থাৎ শ্রীরাম বনে যাওয়ার ব্যপারে না বলেননি।
.
এখানে স্পষ্ট ক্লিয়ার রাম চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিল, সমুদ্র পার হতে ১২ বছর লেগেছিল সেটা মিথ্যা কথা।
👉রাম হনুমানের দুই ভাইকে কেন অকারনে খুন করলেন যেখানে রামের সাথে তাদের কোন শত্রুতা ছিলনা? সৃষ্টিকর্তা হয়ে অপরাধ করা কি সম্ভব?
রাম হনুমানের ভাইকে হত্যা করেননি। হত্যা করেছেন সুগ্রীবের ভাই বালিকে।কারণ বালি সুগ্রীবের স্ত্রীকে বন্ধি রেখেছিলো, এবং সুগ্রীবকে ধন সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিল বালি। আর বালি ছিলো একজন দুরাচারী শাসক। অধার্মিকদের দন্ড প্রধানের জন্য এবং সাধুদের রক্ষার জন্য ঈশ্বর অবতার রুপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।
👉ভগবান রামচন্দ্র লুকিয়ে কেন বালীকে হত্যা করেছিলেন?
ভগবানের কোন কার্য সাধারণ নয়।যার পিছনে থাকে অনেক কারণ।আসুন আমরা জানি কেন ভগবান রাম চন্দ্র বালীকে লুকিয়ে হত্যা করেছিল।
১)শ্রী রামচন্দ্র বালীকে বললেন,তোমাকে তুমি অনেক বড় জ্ঞানী।কিন্তু তুমি এই জ্ঞান প্রামানিক সূত্রে বা শিক্ষকের আনুগত্য থেকে ওনার সেবা করে পাওনি।শুধু তোমার মন ধর্মের মাধ্যমে প্রাপ্ত করেছ। এইজন্য তোমার জ্ঞানে দোষ আছে।
২)তুমি সুগ্রীবের স্ত্রীকে হরণ করেছ,তাকে ভোগ করার প্রয়াস করেছ।আর ছয় প্রকার মৃত্যুতুল্য অপরাধের মধ্যে এটিও একটি। যদি কেউ পরস্ত্রীকে ভোগ করার প্রয়াস করে,তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায়। কারণ তুমি একজন কামুক ব্যক্তি।
৩)তুমি একজন বানর আর আমি একজন ক্ষত্রিয়। আর এই সময় সারা পৃথিবীর সাম্রাজ্যঃ সূর্য বংশের।যদি কোন ব্যক্তি কোন উচিত কার্য করে তাকে দণ্ড দেয়া আমাদের কর্তব্য।
৪)ক্ষত্রিয় দের পশু শিকার করার অনুমতি আছে।যারা ক্ষত্রিয় তারা বাহুবল নিয়ন্ত্রণের জন্য কখনো কখনো সিংহ বা হাতির সাথে লড়াই করতে পারে।এই জন্য আমি তোমাকে মেরে ভুল করিনি।
৫)শ্রী রামানুচার্য বলেছেন,যদি বালী বলতো যে আমি আপনার শরণাগত আমাকে ক্ষমা করুন তাহলে শ্রীরামচন্দ্র তাকে ক্ষমা করতে হতো,তাকে মানা করতে পারতেন না। যে অন্যের স্ত্রী অপহরণ করে,তাকে ক্ষমা করা কি উচিত হবে? তাই বোধ করা আবশ্যক।
৬)ইন্দ্রের আশীর্বাদ পেয়েছিল বালী।বালী যখন যুদ্ধ করবে তার সামনের ব্যক্তির অর্ধেক শক্তি তার মধ্যে এসে যাবে। এমনিতে বালী শক্তিশালী।যদি সামনের ব্যক্তির অর্ধেক শক্তি এসে যায় বালীর ভিতরে তাহলে সে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।কিন্তু এই বরদান ভগবানের জন্য অনুমোদিত না। ভগবানের শক্তি অসীম।অসীম কে অসীম দিয়ে ভাগ করলে অসীম থাকে।অসীম শক্তি বালীর মধ্যে কিভাবে আসবে তা অসম্ভব।ত এখানে ইন্দ্রের বরদান বিফল হয়ে যেত। যদি রামচন্দ্র বালীর সামনে আসতো তাহলে এমনিতে বালীর সমাপ্তি ঘটতো।এইজন্য লুকিয়ে মেরেছিল ভগবান রামচন্দ্র যাতে ইন্দ্রের বরদান বিফল না হয়।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকটি দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=dtm7nguckJs&t=95s
ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে নিয়ে করা বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব (পর্ব-২)

