Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সরস্বতী কে? তিনি কি আসলেই ব্রহ্মার কন্যা? ব্রহ্মা কি পরবর্তী কালে তার কন্যাকেই বিবাহ করে?







অপপ্রচারকারী এইসব মূর্খরা মিথ্যা অপপ্রচার করে একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পায়।তারা তাদের নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য অন্যের দোষ খুঁজে বেরায় কিংবা মিথ্যাচার করে।অনেক সময় তারা সস্তা যুক্তি  বা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়।তারা সরস্বতী কে ব্রহ্মার স্ত্রী প্রমাণ করতে গিয়ে পুরানের কথা বলে কিন্তু তারা কোন সঠিক রেফারেন্স দিতে পারে না।কিন্তু পুরানকে স্থুল জ্ঞানে বিচার না করে সূক্ষ জ্ঞানে বিচার করতে হয়।


👉বেদ, বেদান্ত, পুরাণ শাস্ত্র ও রামায়ণে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে মা সরস্বতী হচ্ছেন পরমেশ্বরের জ্ঞানময় নারী মূর্তি। সেটাই আজকে আমরা রেফারেন্স সহ প্রমাণ করব।
👉প্রথমে এটা জানুন সরস্বতী শব্দের উৎপত্তি কিভাবে?
(সৃ গতৌ) এই ধাতু হইতে "সরস্" তদুত্তর "মতুপ" এবং "ঙীপ" প্রত্যয় যোগে " সরস্বতী " শব্দ সিদ্ধ হয়।
" সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে য়স্যাং চিতৌ সা সরস্বতী "
অর্থাৎ, যাহার বিবিধ বিজ্ঞান অর্থাৎ শব্দ, সমন্ধ ও প্রয়োগের যথাযথ জ্ঞান রয়েছে সেই পরমেশ্বর এর নাম 'সরস্বতী '।
অর্থাৎ, জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর কে সরস্বতী নামে ডাকা হয়।
তিনি কারো কন্যা নন।
👉এইবার ব্যাখ্যায় আসি ব্রহ্মা কে?
(বৃহ বৃহি বৃদ্ধৌ) এই সকল ধাতু হতে 'ব্রহ্মা' শব্দ সিদ্ধ হয়।
"য়োৎ খিলং জগন্নির্মাণেন বর্হতি ( বৃংহতি) বদ্ধর্য়তি স ব্রহ্মা "।
অর্থাৎ, যিনি সমস্ত জগৎ রচনা করিয়া বিস্তৃত করেন সেই পরমেশ্বর এর নাম 'ব্রহ্মা'।
আবার তৈত্তিরীয় উপনিষদে বলা হয়েছে, 'সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম'।
তাহলে কি বুঝলেন? ব্রহ্মা বলুন বা সরস্বতী দুটোই পরমেশ্বর এর গুনবাচক নাম মাত্র।
ব্রহ্মা যেমন জ্ঞানের (wisdom) প্রতীকী। কিন্তু জ্ঞান একটি আধার, তার থেকে নদীর মতন বাক্যের মাধ্যমে যে নির্যাস বেরিয়ে আসে তাই হল বিদ্যা (knowledge)। তাই জন্যেই সরস্বতী দেবী বিদ্যার দেবী, নদী স্বরূপিনী, বাগদেবী। যেহেতু বিদ্যা জন্ম নিয়েছে জ্ঞানের ক্রোরে, তাই বলা হয় সরস্বতী দেবী ব্রহ্মাজাত। আমি যেমন আমার বাবার ছেলে সেইরকম ভাবে সরস্বতী দেবী ব্রহ্মার মেয়ে ভাবলে খুবই ভুল তথ্য।
👉আমাদের সমাজে দুইটা ধারণা খুব প্রচলিত সেটা হলো পুংস্ত্রী। জড়জাগতিক ব্যাখ্যা যাই হোক এর দার্শনিক ব্যাখ্যা অসাধারণ। পুং তথা শিব হলেন হিমালয় হিমালয় স্থির ও অবিচল। স্ত্রী তথা পার্বতী হলেন নদীস্বরূপা গঙ্গা নদী সর্বদা অবিরত বহমান। নদীই হিমালয়ের নির্যাস বয়ে নিয়ে যায় মহাসমুদ্রে।। স্ত্রী ভিন্ন পুং যে নিশ্চল। একই দর্শন ব্রহ্মা ও সরস্বতীর জন্যও। ব্রহ্মা যদি জ্ঞানের গর্ভ হয় তবে সরস্বতী বিদ্যার আধার। সেই নদীস্বরূপা সরস্বতীই বিদ্যাকে জ্ঞানের তথা ব্রহ্মার গর্ভ হতে বয়ে নিয়ে যায় নিরন্তর। আরও স্পষ্ট করে বললে ব্রহ্মা যদি থিওরি হয় সরস্বতী তাঁর অ্যাপ্লিকেশন। নিরন্তর একইসাথে চলমান ব্রহ্মা (জ্ঞান)সরস্বতী (বিদ্যা) কে তাই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যা (বিদ্যার প্রকাশ হয় জিহবায়) ও জ্ঞানের (জ্ঞানের জন্ম হৃদয়ে) এই সম্পর্ক অর্থাৎ ব্রহ্মা ও সরস্বতীকে সুন্দর বর্ণনা করেছেন পরম পিতা ব্রহ্মা নিজে। মহর্ষি বাল্মিকী সেটা লিপিবদ্ধ করেছেন এভাবে,
"ত্রীল্লোকান্ ধারয়ন্ রাম দেবগন্ধর্বদানবান্।
অহং তে হৃদয়ং রাম জিহ্বা দেবী সরস্বতী।।"
(যুদ্ধকান্ড/সর্গ-১১৭)/শ্লোক-২৩
অনুবাদঃ শ্রীরাম! আপনি ত্রিভুবনের দেবতা-দানব-গান্ধর্বদের ধারক বিরাট পুরুষ-নারায়ণ।সকলের হৃদয়স্থিত পরমাত্মা। প্রজাপতি ব্রহ্মা আপনার হৃদয় এবং দেবী সরস্বতী আপনার জিহ্বা
👉দেবীভাগবত পুরাণ
দেবী আদ্যাপ্রকৃতির তৃতীয় অংশে সরস্বতীর জন্ম হয়েছিল। তিনি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সংশয় মোচনকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী দেবী সরস্বতী।
👉ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতিখন্ডের ১ম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, ব্রহ্মাই স্বয়ং সর্বপ্রথমে দেবী সরস্বতীর পূজা করেছেন।




পরে জগতে তাঁর পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর শ্রীকৃষ্ণ জগতে তাঁর পুজো প্রবর্তন করেন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমীতিথিতে।

👉এবার দেখুন বেদের মন্ত্রে অনেক জায়গায় সরস্বতী শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
মন্ত্র গুলো দ্বারা জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর সরস্বতী কে স্তুতি করা হয়েছে। মন্ত্র গুলোর ব্যাখ্যা নিচে দিলাম--

মহা অর্ণঃ সরস্বতী প্র চেতয়তি কেতুনা।
ধিয়ো বিশ্বা বি রাজতি।।
( ঋগ্বেদ ১/৩/১২)

অর্থাৎ, জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর প্রজাশক্তি দ্বারা মহান জ্ঞানসমুদ্রকে প্রকাশ করে এবং ধারনাবতী বুদ্ধি সমুহ কে দীপ্তি দান করে।

চোদয়িত্রী সুনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাম্।
যজ্ঞং দধে সরস্বতী।।
(ঋগ্বেদ ১/৯১/৮)

অর্থাৎ, সত্য ও প্রিয়বানীর প্রেরণাদাত্রী এবং সৎবুদ্ধির চেতনাদাত্রী বিদ্যা শুভ কর্মকে ধারন করিয়া আছে।

শংনো দেবা বিশ্বদেবা ভবন্তু শং সরস্বতী, সহ ধীতি রস্তু।
শমভিষাচঃ শমু রাতিষাচঃ শংনো দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শন্নো অপ্যাঃ।।
(ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১১)

অর্থাৎ, জ্ঞানজ্যোতির রক্ষক বিদ্যানেরা আমাদের কল্যাণ বিধান করুন। জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর নানা প্রকার বুদ্ধির সাথে কল্যান দায়িনী।