Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পুরােহিত-ব্রাহ্মণের গুণাবলির মানদণ্ড


 শ্রীমদ্ভগবদগীতায় (৪/১৩) পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- চাতুর্বর্ণাং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ। “প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মানব সমাজে চারটি বর্ণ সৃষ্টি করেছি।" এবং স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে (গী.১৮/৪১)। ব্রাহ্মণের গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে---

শমাে দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞান বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাজম্॥ (গীতা.১৮/৪২)।
শম (অন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম), দম (বহিরিন্দ্রিয়ের সংযম), তপ (তপস্যা), শৌচ (শুচিতা), ক্ষান্তি (সহিষ্ণুতা), সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য- এগুলাে ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত গুণ বা কর্ম।

শূদ্রে চ তদ্ভবেল্লক্ষা দ্বিজে চেচ্চ ন বিদ্যতে।
ন বৈ শূদ্রো ভবেচ্ছূদ্রো ব্রাহ্মণো ন চ ব্রাহ্মণঃ॥
যত্রৈতল্লক্ষতে সর্প বৃত্তং স ব্রাহ্মণঃ স্মৃতঃ।
যত্রৈতন্ন ভবেৎ সর্প তং শূদ্ৰমিতি নির্দিশেৎ॥
(মহাভারত, বনপর্ব ১৫১.২৫-২৬, যুধিষ্ঠিরবাক্য)

যুধিষ্ঠির বললেন, “শূদ্রে যদি এসকল লক্ষণ থাকে, তবে সে শূদ্রকুলােদ্ভূত হলেও শূদ্র নয়; আবার, ব্রাহ্মণের যদি লক্ষণ না থাকে, তবে সে ব্রাহ্মণও ব্রাহ্মণ নয়। যে পুরুষে এসকল গুণ দেখা যাবে, তিনি শূদ্রলােদ্ভূত হলেও তাকে ব্রাহ্মণ বলে জানবে এবং যে পুরুষে এসকল গুণ থাকবে না, তিনি ব্রাহ্মণকুলােদ্ভূত হলেও তাকে শূদ্র বলে নির্দেশ করবে।"
অর্থাৎ জন্ম অনুসারে নয়, গুণ এবং কর্ম অনুসারেই কারাে বর্ণ নির্ধারিত হয়।
কিন্তু আজকাল পূজার ব্রাহ্মণ নির্বাচনে তা কি বিবেচনা করা হচ্ছে? ব্রাহ্মণ অবশ্যই চারটি পাপকর্ম যথা: আমিষাহার, নেশা, ন্যূতক্রীড়া (তাস, পাশা, জুয়া ইত্যাদি) এবং অবৈধ যৌন সঙ্গ বর্জন করবেন। অর্থাৎ, প্রথমত তাকে সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হতে হবে। রজো-তমোগুণে আচ্ছন্ন অসংযমী ব্যক্তির ন্যায় তিনি নিশ্চয়ই ছাগ-মহিষের মুণ্ডু আর অর্থাদির লালসায় কুশাসনে উপবেসন করবেন না। প্রকৃত ব্রাহ্মণ হবেন তপস্বী, শুচি, সহিষ্ণু এবং সরলহৃদয়; শাস্ত্রজ্ঞানে পারদর্শী এবং ভগবানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাপরায়ণ। অথচ, বর্তমান সমাজে যাদের পুরােহিত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, অধিকাংশই সাত্ত্বিক আহার করেন না, অধিকন্তু পূজামণ্ডপে প্রবেশের আগে না হয় পরে চা, পান, সিগারেট এসবের অন্তত কোনাে একটির পূজা করে নেন। আর শাস্ত্রজ্ঞানের কথা কী বলব! অনেকে সঠিকভাবে মন্ত্রই উচ্চারণ করতে পারেন না। এখন তােমার কাছে প্রশ্ন, যথার্থ গুণযুক্ত না হলে, কেবল তােতা পাখির মতাে মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারলেই কি কেউ পূজা করার অধিকারী হন? অথবা তাদের পুরােহিত হিসেবে নিযুক্ত করেই বা কী লাভ? তাদের আহ্বানে কি পূজ্যদেব আবির্ভূত হন, নাকি সন্তুষ্ট হন? আমরা কোনাে ব্রাহ্মণের হৃদয় ব্যথিত করতে চাই না, শুধু এটুকুই বলতে চাই যে, ব্রাহ্মণ্য গুণসম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও যারা পৌরহিত্য করছেন, তারা যেন দয়া করে প্রকৃত ব্রাহ্মণ-গুণসম্পন্ন হন এবং যারা পুরােহিত নির্বাচন করছেন, তারাও যেন যােগ্য ব্যক্তিকেই পূজাকার্যে নিযুক্ত করেন। প্রকৃতপক্ষে, ব্রাহ্মণকুলে জন্ম না নিয়েও (এমনকি শূদ্রকুলেও) যদি কেউ ঐ গুণগুলাে অর্জন করেন, তবে তিনি ব্রাহ্মণ বলে বিদিত হবেন এবং তিনিই পূজা ও অন্যান্য বৈদিক সংস্কার কার্য সম্পাদনের অধিকারী।