👉বিধর্মীরা এই অপপ্রচারটা কেবল শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে করেনি, করেছে প্রত্যেক সনাতনীর আবেগকে।তাই আমরা সেই রকম কিছু প্রসঙ্গ আনবো যেটার মাধ্যমে মিথ্যাচারীদের মুখোশ উন্মোচন হবে।
."শ্রীকৃষ্ণ" যিনি পরমেশ্বর ভগবান। প্রত্যেক মানুষের জীবনে তিনটা সময় আসে শিশু, যুবক আর বার্ধক্য।
.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের তিনটি শাস্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। শিশু বয়সের জন্য শ্রীমদ্ভাগবত, যুবক বয়সের জন্য মহাভারত এবং বার্ধক্য বয়সের জন্য হরিবংশ পুরান।
.
এখানে বিধর্মীরা শ্রীকৃষ্ণের শিশু বয়সকেই নির্দেশ করেছে।। কেননা গোপীগণ ছিলো শ্রীকৃষ্ণের বাল্য বয়সে। তাই আমাদের শ্রীমদ্ভাগবত এর সহায়তা নিতে হবে।
.👉আসুন দেখে নিই আসল ঘটনাটা কি???
.
ভাগবতের ১০ম স্কন্ধের ২২ তম অধ্যায়ের নাম "বস্ত্র হরণ"
সেখানের ১-৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে---
অগ্রহায়ণ মাসে গোপীরা দেবী কাত্যায়নীর ব্রত পালনের জন্য প্রবিষ্ট হলেন, সূর্য উঠার আগে থেকে তারা যমুনা নদীতে স্নান করতে যেতো, স্নান করার পর তারা বালি দিয়ে দেবী কাত্যায়নীর প্রতিমা গড়ে ধূপ, দ্বীপ,পল্লব, ফলমূলাদি ও অন্যান্য বস্তু দিয়ে তাঁর পূজা করতো।
গোপীরা দেবী কাত্যায়নীর তাছে প্রার্থনা করে বলতো "হে কাত্যায়নী, হে মহামায়া, হে মহাযোগীনি নন্দ গোপের পুত্রকে(কৃষ্ণ) আমার পতি করে দিন। পুরো একমাস তারা নিষ্টাভরে ব্রত পালন করেন। গোপীরা একে অপরের হাত ধরাধরি করে শ্রীকৃষ্ণের গুনকীর্তন করতেন।
.
এ তো গেলো ১-৬ শ্লোকের কথা। পরবর্তী শ্লোকের কথাগুলো নিম্নরুপ---
ভাগবত :- ১০/২২/৭
"একদিন (ব্রতের শেষ দিন) তারা অন্যান্য দিনের মতো নদীতে এসে নিজেদের অঙ্গবস্ত্র গুলি তীরে রেখে কৃষ্ণগুনগান করতে করতে গোপীরা আনন্দের সাথে জল ক্রীড়ায় মগ্ন ছিলেন"
.
ভাগবত:- ১০/২২/৮
"পরীক্ষিত বললেন- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন যোগেশ্বরগণেরও ঈশ্বর, তার অজানা কোন কিছুই ছিলনা। তিনি তাদের(গোপী) মন বাসনা সফল করার জন্য বয়স্য পরিবৃত হয়ে সেই যমুনাপুলিনে আগমন করলেন। "
.
ভাগবত:- ১০/২২/৯
"তীরে পরিত্যক্ত গোপ কন্যাদের বস্ত্রগুলি সংগ্রহ করে তিনি সহ একটি কদম বৃক্ষের ওপর আরোহন করলেন এবং তার সঙ্গী বালকেরা এই কৌতুক দেখে হাসতে লাগলো এবং তিনিও হাসতে লাগলেন এবং কুমারীদের পরিহাস করতে বলতে লাগলেন।
.
ভাগবত:- ১০/২২/১০
"ওহে অবলাগণ এই যে দেখো তোমাদের বস্ত্রগুলি আমার কাছে রয়েছে,তোমরা ইচ্ছা মতো এসে নিয়ে যাও,আমি সত্যই বলছি, কোন রকম পরিহাস করছিনা আর করবোই বা কেনো তোমরা একমাস ব্রত পালন করতে করতে পরিশ্রান্ত ও দূর্বল হয়ে গেছো।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১১
"আর আমি যে মিথ্যা বলিনা, আগেও মিথ্যা বলিনি তা এরাও(গোপবালকেরা) জানে। কাজেই, সুন্দরীবৃন্দ তোমরা একজন হোক কিংবা সবাই একসঙ্গে তোমাদের কাপড় নিয়েও যাও। এই বিষয়ে আমার কিছুই বলবার নেই।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১২
"যাকে(কৃষ্ণ) কামনা করে তাদের এই ব্রত কিংবা কৃষ্ণসাধন তিনি স্বয়ং উপস্থিত হয়েছেন তাদের(গোপী) কাছে, নিজের থেকেই সুত্রপাত করেছেন এই কৌতুকলীলার, গোপীগনের প্রেমরস টল মল করছিল এই ঘটনায়, তবুও তারা লজ্জার বহিরাবরণটুকু ত্যাগ করতে পারছিলেন না, গোপীগণ সকলের মন সকলেই জানেন, তাই পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে গোপন হাসি আড়াল করতে পারছিলো না, যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ জল থেকে উঠল না।"
👉উপরিউক্ত শ্লোক থেকে এটাই প্রমাণিত শ্রীকৃষ্ণ লুকিয়ে স্নানরত গোপীদের দেখছিলেননা। কেননা তিনি কাপড় নেওয়ার পর পরই সেটা গোপীদের বলে দিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ একা সেখানে যান সেখানে গোপবালকরা সহ গিয়েছিল।
কিন্তু বিধর্মীরা এমন ভাবে কথা গুলো প্রচার করে যেন শ্রীকৃষ্ণ একা গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গোপীদের জল ক্রীড়া দেখতেছে।
এটা কদাচারীদের অভ্যাস বলতে পারেন অন্যের বউয়ের দিকে কিংবা অন্যের মেয়ের দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে তাকানো, ভাবতেছে এই অভ্যাস শ্রীকৃষ্ণের ছিলো।
ওহে গন্ডমূর্খ, উনি পরমেশ্বর জগতের সব কিছু তিনি দেখেন।
এইতো গেলো ১ম অংশ,এবার জানা যাক পুরো ঘটনা-
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৩-১৪ তে স্পস্ট ভাবে উল্লেখ আছে শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের পরিহাস করাতে গোপীগণ বিভিন্ন ভাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে মিনতি করেছে কাপড় ফেরত দিতে। কেননা নদীর ঠান্ডা জলে গোপীরা কাপতে লাগলো।
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৫
এই শ্লোকে গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে বলল "হে শ্যামসুন্দর! আমরা তোমার দাসী, তুমি যা বলবে আমরা তাই করবো, আমাদের কাপড় দিয়ে দাও, নইলে নন্দমহারাজকে বলে দিতে বাধ্য হবো।"
.
এখানে কিন্তু ভগবান গোপীদের নিজের দাসত্ব করতে বলেনি গোপীগণ নিজেরাই ভগবানের দাসী বলে স্বীকার করলো।
বাস্তবে আমরা সাবাই পরমেশ্বরের দাস। আমাদের উচিত একমাত্র ভগবানের দাসত্ব করা।
ভাগবত:- ১০/২২/১৬
"ভগবান বললেন তোমরা বলেছ আমার দাসী, তাই তোমাদের বলছি তোমরা এসে কাপড় নিয়ে যাও।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৭
পরীক্ষিৎ বললেন "সত্যিই গোপীরা খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন,তাদের সর্বাঙ্গ কাঁপতে লাগলো, অবশেষে নিজেরা নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করে জল থেকে উঠে এলো।"
.
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কেনো শ্রীকৃষ্ণ কাপড় নিয়ে নিল???
এই প্রশ্নের উত্তর নিম্নের দুইটা শ্লোকে আছে---
ভাগবত:- ১০/২২/১৮
"সেই গোপকন্যাদের মনে কোন কলুষ ছিলোনা, তাদের শুদ্ধভাব ও সরলতা ভগবানের মনকে প্রসন্ন করলো, তার কথা মতো গোপীরা নিজের কাছে আসতে দেখে ভগবান বস্ত্রগুলি নিজের কাধে তুলে প্রীতিস্ননিগ্ধ হাসি দিয়ে বললেন।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৯
"প্রিয় গোপীকাগণ তোমরা যে ব্রত গ্রহণ করেছিলে তা অত্যন্ত নিষ্টার সঙ্গে পালন করেছো তাতে কোন সন্দেহ নেই, অজ্ঞানতই তোমাদের একটা ক্রটি ঘটে গিয়েছে, ব্রত পালনকালে জলে বিবস্ত্র হয়ে স্নান করা ভালো নয়, এতে জলের দেবতার(বরুন) প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়, তাঁর কাছে অপরাধ হয়, সুতরাং তোমরা পাপ মোচনের জন্য তার কাছে জোড়হাত মাথায় ঠেকিয়ে তাকে প্রণাম করে নিজেদের কাপড় নিয়ে যাও।"
.
ভাগবত ১০/২২/২০
ভগবান অচ্যুত এই কথা বললে গোপীগণ মনে করলো বিবস্ত্র স্নান করায় তাদের ব্রতচ্যূতি ঘটলো, গোপীগণ জানেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা তাই তারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করে ক্ষমা প্রার্থনা করলো।"
.
ভাগবত ১০/২২/২১
"গোপীগণের প্রণত হতে দেখে ভগবানের করুনা হলো, এবং তাদের কাপড় ফিরিয়ে দেওয়া হলো।"
এখানেই শেষ নয়।
ভাগবত ১০/২২/২২ অনুসারে সেখানে বয়স্যরাও ছিলেন।
.
তাদের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীকৃষ্ণ একাই ছিলেন।
কিন্তু পুরো ঘটনাটাই বিপরীত।
সেখানে প্রথমত শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, দ্বিতীয়ত গোপ বালকেরা ছিলেন, তৃতীয়ত জলের দেবতা বরুনদেব ছিলেন এবং চতুর্থত ঘটনার শেষের দিকে বয়স্যরাও ছিলেন।
👉যদি আপনি শ্রীকৃষ্ণ কে একজন স্বাভাবিক বালক হিসেবে চিন্তা করেন তাহলে তা কেবল অবোধ বালকের কাজ, এতে তার চরিত্র দূষিত হয় না কারণ ৭/৮ বছরের বালকের এই ধরনের কাজ কে সমাজের দুষ্টুমির চেয়ে বেশী কিছু মনে করে না। কিন্তু ভগবান যেহেতু সাধারণ হয় না তাই তার কোন কার্যই কারন ছাড়া হয় না। আমাদের সনাতন শাস্ত্রে উশৃঙ্খলতার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।এই লীলার উদ্দেশ্য হলো গোপিনীদের ভুল ধরিয়ে দেওয়া।
কোন অপপ্রচারকারীর মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না।তাই নিজেই সত্যটাকে জানুন,সত্যকে বের করুন। সত্যকে বের করতে চাইলে স্বয়ং ভগবান আপনাকে অবশ্যই সহায়তা করবেন।

