Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে করা অপপ্রচারের জবাব

 


👉গোপীদের কাপড় চুরি করা নিয়ে বিধর্মীদের শ্রীকৃষ্ণকে করা কটুক্তির এবং তাদের অজ্ঞতার জবাব


বিধর্মীরা এই অপপ্রচারটা কেবল শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে করেনি, করেছে প্রত্যেক সনাতনীর আবেগকে।তাই আমরা সেই রকম কিছু প্রসঙ্গ আনবো যেটার মাধ্যমে মিথ্যাচারীদের মুখোশ উন্মোচন হবে।

."শ্রীকৃষ্ণ" যিনি পরমেশ্বর ভগবান। প্রত্যেক মানুষের জীবনে তিনটা সময় আসে শিশু, যুবক আর বার্ধক্য।
.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের তিনটি শাস্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। শিশু বয়সের জন্য শ্রীমদ্ভাগবত, যুবক বয়সের জন্য মহাভারত এবং বার্ধক্য বয়সের জন্য হরিবংশ পুরান।
.
এখানে বিধর্মীরা শ্রীকৃষ্ণের শিশু বয়সকেই নির্দেশ করেছে।। কেননা গোপীগণ ছিলো শ্রীকৃষ্ণের বাল্য বয়সে। তাই আমাদের শ্রীমদ্ভাগবত এর সহায়তা নিতে হবে।

.👉আসুন দেখে নিই আসল ঘটনাটা কি???
.
ভাগবতের ১০ম স্কন্ধের ২২ তম অধ্যায়ের নাম "বস্ত্র হরণ"
সেখানের ১-৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে---
অগ্রহায়ণ মাসে গোপীরা দেবী কাত্যায়নীর  ব্রত পালনের জন্য প্রবিষ্ট হলেন, সূর্য উঠার আগে থেকে তারা যমুনা নদীতে স্নান করতে যেতো, স্নান করার পর তারা বালি দিয়ে দেবী কাত্যায়নীর প্রতিমা গড়ে ধূপ, দ্বীপ,পল্লব, ফলমূলাদি ও অন্যান্য বস্তু দিয়ে তাঁর পূজা করতো।
গোপীরা দেবী কাত্যায়নীর তাছে প্রার্থনা করে বলতো "হে কাত্যায়নী, হে মহামায়া, হে মহাযোগীনি নন্দ গোপের পুত্রকে(কৃষ্ণ) আমার পতি করে দিন। পুরো একমাস তারা নিষ্টাভরে ব্রত পালন করেন। গোপীরা একে অপরের হাত ধরাধরি করে শ্রীকৃষ্ণের গুনকীর্তন করতেন।
.
এ তো গেলো ১-৬ শ্লোকের কথা। পরবর্তী শ্লোকের কথাগুলো নিম্নরুপ---
ভাগবত :- ১০/২২/৭
"একদিন (ব্রতের শেষ দিন) তারা অন্যান্য দিনের মতো নদীতে এসে নিজেদের অঙ্গবস্ত্র গুলি তীরে রেখে কৃষ্ণগুনগান করতে করতে গোপীরা আনন্দের সাথে জল ক্রীড়ায় মগ্ন ছিলেন"
.
ভাগবত:- ১০/২২/৮
"পরীক্ষিত বললেন- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন যোগেশ্বরগণেরও ঈশ্বর, তার অজানা কোন কিছুই ছিলনা। তিনি তাদের(গোপী) মন বাসনা সফল করার জন্য বয়স্য পরিবৃত হয়ে সেই যমুনাপুলিনে আগমন করলেন। "
.
ভাগবত:- ১০/২২/৯
"তীরে পরিত্যক্ত গোপ কন্যাদের বস্ত্রগুলি সংগ্রহ করে তিনি সহ একটি কদম বৃক্ষের ওপর আরোহন করলেন এবং তার সঙ্গী বালকেরা এই কৌতুক দেখে হাসতে লাগলো এবং তিনিও হাসতে লাগলেন এবং কুমারীদের পরিহাস করতে বলতে লাগলেন।
.
ভাগবত:- ১০/২২/১০
"ওহে অবলাগণ এই যে দেখো তোমাদের বস্ত্রগুলি আমার কাছে রয়েছে,তোমরা ইচ্ছা মতো এসে নিয়ে যাও,আমি সত্যই বলছি, কোন রকম পরিহাস করছিনা আর করবোই বা কেনো তোমরা একমাস ব্রত পালন করতে করতে পরিশ্রান্ত ও দূর্বল হয়ে গেছো।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১১
"আর আমি যে মিথ্যা বলিনা, আগেও মিথ্যা বলিনি তা এরাও(গোপবালকেরা) জানে। কাজেই, সুন্দরীবৃন্দ তোমরা একজন হোক কিংবা সবাই একসঙ্গে তোমাদের কাপড় নিয়েও যাও। এই বিষয়ে আমার কিছুই বলবার নেই।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১২
"যাকে(কৃষ্ণ) কামনা করে তাদের এই ব্রত কিংবা কৃষ্ণসাধন তিনি স্বয়ং উপস্থিত হয়েছেন তাদের(গোপী) কাছে, নিজের থেকেই সুত্রপাত করেছেন এই কৌতুকলীলার, গোপীগনের প্রেমরস টল মল করছিল এই ঘটনায়, তবুও তারা লজ্জার বহিরাবরণটুকু ত্যাগ করতে পারছিলেন না, গোপীগণ সকলের মন সকলেই জানেন, তাই পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে গোপন হাসি আড়াল করতে পারছিলো না, যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ জল থেকে উঠল না।"

👉উপরিউক্ত শ্লোক থেকে এটাই প্রমাণিত শ্রীকৃষ্ণ লুকিয়ে স্নানরত গোপীদের দেখছিলেননা। কেননা তিনি কাপড় নেওয়ার পর পরই সেটা গোপীদের বলে দিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ একা সেখানে যান সেখানে গোপবালকরা সহ গিয়েছিল।
কিন্তু বিধর্মীরা এমন ভাবে কথা গুলো প্রচার করে যেন শ্রীকৃষ্ণ একা গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গোপীদের জল ক্রীড়া দেখতেছে।

এটা কদাচারীদের অভ্যাস বলতে পারেন অন্যের বউয়ের দিকে কিংবা অন্যের মেয়ের দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে তাকানো, ভাবতেছে  এই অভ্যাস শ্রীকৃষ্ণের ছিলো।
ওহে গন্ডমূর্খ, উনি পরমেশ্বর জগতের সব কিছু তিনি দেখেন।

এইতো গেলো ১ম অংশ,এবার জানা যাক পুরো ঘটনা- 
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৩-১৪ তে স্পস্ট ভাবে উল্লেখ আছে শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের পরিহাস করাতে গোপীগণ বিভিন্ন ভাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে মিনতি করেছে কাপড় ফেরত দিতে। কেননা নদীর ঠান্ডা জলে গোপীরা কাপতে লাগলো।
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৫
এই শ্লোকে গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে বলল "হে শ্যামসুন্দর!  আমরা তোমার দাসী, তুমি যা বলবে আমরা তাই করবো, আমাদের কাপড় দিয়ে দাও, নইলে নন্দমহারাজকে বলে দিতে বাধ্য হবো।"
.
এখানে কিন্তু ভগবান গোপীদের নিজের দাসত্ব করতে বলেনি গোপীগণ নিজেরাই ভগবানের দাসী বলে স্বীকার করলো।
বাস্তবে আমরা সাবাই পরমেশ্বরের দাস। আমাদের উচিত একমাত্র ভগবানের দাসত্ব করা।

ভাগবত:- ১০/২২/১৬
"ভগবান বললেন তোমরা বলেছ আমার দাসী, তাই তোমাদের বলছি তোমরা এসে কাপড় নিয়ে যাও।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৭
পরীক্ষিৎ বললেন "সত্যিই গোপীরা খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন,তাদের সর্বাঙ্গ কাঁপতে লাগলো, অবশেষে নিজেরা নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করে জল থেকে উঠে এলো।"
.
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কেনো শ্রীকৃষ্ণ কাপড় নিয়ে নিল???
এই প্রশ্নের উত্তর নিম্নের দুইটা শ্লোকে আছে---
ভাগবত:- ১০/২২/১৮
"সেই গোপকন্যাদের মনে কোন কলুষ ছিলোনা,  তাদের শুদ্ধভাব ও সরলতা ভগবানের মনকে প্রসন্ন করলো, তার কথা মতো গোপীরা নিজের কাছে আসতে দেখে ভগবান বস্ত্রগুলি নিজের কাধে তুলে প্রীতিস্ননিগ্ধ হাসি দিয়ে বললেন।"
.
ভাগবত:- ১০/২২/১৯
"প্রিয় গোপীকাগণ তোমরা যে ব্রত গ্রহণ করেছিলে তা অত্যন্ত নিষ্টার সঙ্গে পালন করেছো তাতে কোন সন্দেহ নেই, অজ্ঞানতই তোমাদের একটা ক্রটি ঘটে গিয়েছে, ব্রত পালনকালে জলে বিবস্ত্র হয়ে স্নান করা ভালো নয়, এতে জলের দেবতার(বরুন) প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়, তাঁর কাছে অপরাধ হয়, সুতরাং তোমরা পাপ মোচনের জন্য তার কাছে জোড়হাত মাথায় ঠেকিয়ে তাকে প্রণাম করে নিজেদের কাপড় নিয়ে যাও।"
.
ভাগবত ১০/২২/২০
ভগবান অচ্যুত এই কথা বললে গোপীগণ মনে করলো বিবস্ত্র স্নান করায় তাদের ব্রতচ্যূতি ঘটলো, গোপীগণ জানেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা তাই তারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করে ক্ষমা প্রার্থনা করলো।"
.
ভাগবত ১০/২২/২১
"গোপীগণের প্রণত হতে দেখে ভগবানের করুনা হলো, এবং তাদের কাপড় ফিরিয়ে দেওয়া হলো।"

এখানেই শেষ নয়।

ভাগবত ১০/২২/২২ অনুসারে সেখানে বয়স্যরাও ছিলেন।
.
তাদের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীকৃষ্ণ একাই ছিলেন।
কিন্তু পুরো ঘটনাটাই বিপরীত।
সেখানে প্রথমত শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, দ্বিতীয়ত গোপ বালকেরা ছিলেন, তৃতীয়ত জলের দেবতা বরুনদেব ছিলেন এবং চতুর্থত ঘটনার শেষের দিকে বয়স্যরাও ছিলেন।

👉যদি আপনি শ্রীকৃষ্ণ কে একজন স্বাভাবিক বালক হিসেবে চিন্তা করেন তাহলে তা কেবল অবোধ বালকের কাজ, এতে তার চরিত্র দূষিত হয় না কারণ ৭/৮ বছরের বালকের এই ধরনের কাজ কে সমাজের দুষ্টুমির চেয়ে বেশী কিছু মনে করে না। কিন্তু ভগবান যেহেতু সাধারণ হয় না তাই তার কোন কার্যই কারন ছাড়া হয় না। আমাদের সনাতন শাস্ত্রে উশৃঙ্খলতার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।এই লীলার উদ্দেশ্য হলো গোপিনীদের ভুল ধরিয়ে দেওয়া।

কোন অপপ্রচারকারীর মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না।তাই নিজেই সত্যটাকে জানুন,সত্যকে বের করুন। সত্যকে বের করতে চাইলে স্বয়ং ভগবান আপনাকে অবশ্যই সহায়তা করবেন।

👉কিছু অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন,কদাচারী বিধর্মীরা অপপ্রচার করে “তিনি কেমন ভগবান যিনি নিজের মামীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন।”

অত্যাচারী রাজা কংস দৈববানীর মাধ্যমে জানতে পারেন যে , কাকাতো বোন দেবকীর গর্ভজাত পুত্র সন্তানের হাতে কংস এর মৃত্যু হবে । আর এটা জেনেই দেবকীর পুত্র কৃষ্ণ কে ছলে বলে কৌশলে কংস হত্যা করতে চাইতেন। শ্রী কৃষ্ণের মামা কংস রাজা ছিলেন , মানে কংস ক্ষত্রীয় বর্ণজাত ছিলেন । যদি তাই হয় তাহলে “আয়ান ঘোষ” এর স্ত্রী, শ্রী কৃষ্ণের প্রেমিকা, রাধা কিভাবে শ্রী কৃষ্ণের মামী হন ? কারণ “আয়ান ঘোষ” ছিলেন গোপ মানে গোয়ালা । আর অন্যদিকে “শ্রী রাধিকা” জমিদার কন্যা হলেও ছিলেন গোপ বংশ জাত মানে গোপিনী ছিলেন । এই সমস্যার সমধান করতে হলে আমাদের শ্রী কৃষ্ণের জন্ম ও শৈশব সম্বন্ধে জানতে হবে । শ্রী কৃষ্ণের জন্মদাতা পিতার নাম বাসুদেব,যিনি গোষ্ঠপতি(সামান্ত প্রভু) ছিলেন । শ্রী কৃষ্ণের মাতার নাম দেবকী,যে কিনা রাজা কংসের কাকাতো বোন ছিলেন । কিন্তু কংসের হাত থেকে শ্রী কৃষ্ণ কে বাঁচাতে পিতা-মাতা মিলে শিশু কৃষ্ণকে “নন্দ ঘোষ” ও তার স্ত্রী “যশোদা” এর নিকট রেখে আসেন । সেই থেকে শ্রী কৃষ্ণ “নন্দ ঘোষ” ও তাঁর স্ত্রী “যশোদা” কে বাবা-মা হিসাবে ডাকতে থাকেন । এবং “নন্দ ঘোষ” ও “যশোদা” ছিলেন গোপ বা গোয়ালা । আর শ্রী কৃষ্ণের পালক মাতা যশোদার ভাই “আয়ান ঘোষ” । এই সূত্রেই শ্রী রাধিকা, শ্রী কৃষ্ণের মামী । এখানেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে “রাধিকা” কোনভাবেই শ্রী কৃষ্ণের আপন মামী নন । অন্যদিকে বড়ূ চন্ডীদাস বা অন্য কোন কবি বা শ্রী কৃষ্ণ গবেষক এটা পরিষ্কার করে বলেননি যে মাতা যশোদার কেমন ভাই “আয়ান ঘোষ” । শ্রী রাধিকার সাথে কৃষ্ণের পরিণত বয়সে প্রথম দেখা হয় “কালিয়া বধ” এর পরে । তখন কৃষ্ণ শ্রী রাধিকাকে চিনতে পারেন নি মামী হিসাবে। আর সেকারণেই “শ্রী কৃষ্ণ” তার বন্ধু “সুবল” কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন “ওই নারীটি কে” ? তার মানে এটা পরিষ্কার “আয়ান” দাদা “যশোদা” মাঈয়ের খুব একটা কাছের সম্পর্কের কোন ভাই নন । যদি আপন এমনকি কাজিন কুজিনও হতেন তাহলে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে যাওয়া-আসা থাকত , আর সেটা থাকলে শ্রী রাধিকাকে চিনতে কৃষ্ণের কোন কষ্ট হত না । তাহলে আমরা বলতেই পারি “আয়ান ঘোষ” সম্পর্কে “যশোদা” এর রক্ত বা বৈবাহিক বা কোন সম্পর্কেই ভাই হন না । হয়ত একই এলাকায় বসবাস বা একই গোত্রভুক্ত হওয়ার কারণে আয়ান যশোদাকে দিদি বলে ডাকত।

👉শ্রীকৃষ্ণ ভগবান । রাধারাণী হচ্ছেন মূর্তিমতী ভক্তি । সখীবৃন্দ হচ্ছেন রাধারাণীর বিস্তার বা কায়ব্যূহ । মূর্তিমতী ভক্তির মাধ্যমে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় । শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যদি কেউ আমাকে জানতে চায় তবে তাকে অবশ্য ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে । ভক্ত্যা মাম্ অভিজানাতি । হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে প্রথমেই ‘হরে’ কথাটি বলতে ‘হে রাধারাণী’ বা ‘হে শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িনী’ বা হরা শক্তিকে বোঝায় । অভিমানী ব্যাক্তিরা আগে কৃষ্ণকে ভগবান মনে করে আর নিজেকে ভক্ত মনে করে । কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শিখিয়েছেন যারা কৃষ্ণের সেবা করছেন সর্বক্ষণ সর্বভাবে তাঁদের দাসানুদাস হতে । তাই সেই নিত্য সেবাভাব পরিস্ফুট করবার জন্য শ্রীকৃষ্ণের চতুস্পার্শে তাঁর সেবাপরায়ণা শক্তি সমূহ বিরাজ করছেন । তাছাড়া কৃষ্ণ কখনও একাকী থাকতে চান না, সর্বদা তাঁর সঙ্গে কেউ না কেউ থাকবেনই । অতএব সেইভাবে শ্রীকৃষ্ণ উপাসনাই পূর্ণ ও যথার্থ বলে স্বীকার্য ।

👉শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে –

কৃষ্ণবাঞ্ছা-পূরতি হেতু করে আরাধনে ।
অতএব রাধিকা নাম পুরাণে বাখানে ।।
পুরাণে বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হয়ে সহসা তার শ্রীপাদপদ্ম সেবার জন্য যিনি ধাবিত হয়ে পুস্পচয়ন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রথম আরাধনার বিধান করলেন তিনি হচ্ছেন রাধা ।
শ্রীমতী রাধারাণী সম্বন্ধে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন –
মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী ।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি ।।
অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সীগণের শিরোমণি ।”
গোলকে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা নিত্য কান্ত ও কান্তারূপে বিরাজমান । সেই কথা শ্রীব্রহ্মা ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৭ শ্লোকে) বর্ণনা করেছেন, “পরম আনন্দদায়িনী শ্রীমতী রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতী রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপীরা যার নিত্য লীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি ।”
ভগবানের ভক্ত পার্ষদগণ কত সুন্দরভাবেই শ্রীশ্রী রাধা কৃষ্ণ কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সেই সব সুন্দর সরল কথাগুলি জেনেও ‘সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসী’ বলে চিন্তাকরতে থাকেন । জটিল আর কুটিল মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরাই রাধারাণীকে কৃষ্ণের মামী বলে ব্যাখ্যা করতেই পারেন । কারণ আপন লাম্পট্য ভাবধারা দিয়ে ভগবানের চরিত্র ব্যাখ্যা করে তারা আমোদ পেতে খুবই আগ্রহী । ষড় গোস্বামীর গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে তারা কখনও অনর্থক কথাগুলি বলতে পারেন না । শ্রী রাধারাণী হচ্ছেন কৃষ্ণপ্রিয়া আর শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন রাধানাথ ।

👉রাধারাণী বিবাহিতা হয়েও কৃষ্ণকে আবার কিভাবে বিবাহ করলেন ?

লহ্মীদেবী যেমন নারায়ণের নিত্যশক্তি । কখনও লহ্মীদেবীকে বিবাহ করে নারায়ণ পত্নীত্বে বরণ করেছিলেন-এমন নয় । তারা চিরকাল নিত্য পতি পত্নী রূপেই বিরাজমান । তেমনই গোলোকে শ্রীরাধারাণী ও শ্রীকৃষ্ণ নিত্য দম্পতিরূপে বিরাজমান । কিন্তু ভৌম ব্রজলীলায় রাধারাণীর সঙ্গে অভিমন্যু বা আয়ান ঘোষের যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল তা বিশেষ লীলারস আস্বাদন করার জন্য ভগবানের যোগমায়া শক্তির অঘটন-ঘটন পটীয়সী ব্যবস্থাপনা মাত্র । ভগবান শ্রীহরিকে দর্শনের জন্য অভিমন্যু পূর্ব জীবনে কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন । তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীহরি তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমি কি বর চাও ? যখন তপস্বী বলেছিলেন, “হে ভগবান ! আপনি আমাকে কি দিতে পারেন ?” শ্রীহরি বলেছিলেন, “তুমি যা চাইবে তাই দেবো ।” শ্রীহরির এই বাক্যের সততাকে পরীক্ষা করবার জন্য তপস্বী বলেছিলেন, “আমি চাই লহ্মীদেবীকে পত্নীরূপে লাভ করতে ।”
তপস্বীর এই রকম অদ্ভুত বর শুনে পরমেশ্বর শ্রীহরি বলেছিলেন, “হে তপস্বী ! তুমি যখন দ্বাপরে জটিলার পুত্ররূপে জন্মগ্রহন করবে তখন তোমার বাসনা পূর্ণ হবে, কিন্তু কখনও তুমি লহ্মীকে স্পর্শ করতে পারবে না ।” এই বলে শ্রীহরি অদৃশ্য হলেন ।
পরবর্তীতে সেই তপস্বী জটিলাদেবীর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । কিন্তু বিবাহ লগ্নে তাঁর বুদ্ধিভ্রম হয় । তিনি দর্শকের মতোই বসে থাকেন । রাধারানী শ্রীকৃষ্ণের কাছে বহু মিনতি করেছিলেন যাতে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তার বরণ মালা কেউ যেন গ্রহণ না করে । ঘটনা ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণই বিবাহ বেদীতে রাধারাণীর মালা গ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু উপস্থিত জনতার কাছে শ্রীকৃষ্ণ অভিমন্যু(আয়ান ঘোষ) রূপেই প্রতিভাত হন । যেভাবে মথুরায় কংসযুদ্ধে তিনি বিভিন্নরূপে প্রতিভাত হয়েছিলেন ।
শ্রীকৃষ্ণ কাউকেই বিরক্ত করতে চাননি । কিন্তু লীলার খাতিরে পূর্বে রাধারাণী অভিশপ্ত হয়েছিলেন যে, শতবর্ষ তাকে কৃষ্ণবিরহে থাকতে হবে । তাই অভিমন্যুর ঘরেই শ্রীমতী রাধারাণী গৃহিণীমাত্র হয়ে দিন অতিবাহিত করে সর্বক্ষণ শ্রীকৃষ্ণ চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন । এটিই ছিল অভিমন্যুর পূর্বজীবনের তপস্যার ফল স্বরূপ । প্রকৃতপক্ষে শ্রীরাধারাণীর বিবাহ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গেই হয়েছিল, অভিমন্যুর সঙ্গে কদাপি নয় ।কৃষ্ণের মায়ায় প্রভাবিত হয়ে বৃষভানু আয়ান মনে করে শ্রীকৃষ্ণের নিকটই শ্রীমতি রাধিকার কণ্যাদান করেছিলেন।

👉রেফারেন্স- ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরখন্ড, অধ্যায় -১৫

👉রাসলীলার নামে পুরুষ-মহিলার নৃত্যকীর্তনের যৌক্তিকতা কি ?

রাসলীলা কখনই অনুকরণীয় নয় । প্রজাপতি ব্রহ্মা, স্বর্গরাজ ইন্দ্র, সমস্ত দেব-দেবী, গন্ধর্ব, অপ্সরা-কারও পক্ষে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর হ্লাদিনী শক্তি শ্রীরাধারাণীর রাসলীলা অনুপ্রবেশ বা অনুকরনের যোগ্য নয় । তবে সে বিষয়ে মানুষের পক্ষে আর কি কথা ? শ্রীব্রহ্মা ষাট হাজার বছর তপস্যা করেও ভগবদহ্লাদিনী শক্তি ব্রজগোপিকাগণের চরণের ধূলিকণা মাত্র লাভ করার আকাঙ্ক্ষাও পূরণ করতে সক্ষম হননি । বৈকুন্ঠের লহ্মীদেবী শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলায় প্রবেশ করার সৌভাগ্য পর্যন্ত লাভ করতে পারেননি, তাই তিনি যমুনার অপর পারে কৃষ্ণপাদপদ্ম ধ্যানেই উপবিষ্ট হয়ে থাকলেন । মহাদেব শিব রাসলীলা দর্শনে গিয়েই বঞ্চিত হয়েছিলেন । অতএব যেখানে এইরকম অবস্থা ঘটে, সেই ক্ষেত্রে কি করে মল-মূত্র-কফ-পিত্ত বিশিষ্ট আধিব্যাধিযুক্ত, ধর্মনিষ্ঠাহীন, ব্রতহীন, কামুক লম্পট দুরাচারী, মদ্যমাংস প্রিয়, নেশাসেবী, জড়বুদ্ধিসর্বস্ব এঁচড়ে পাকাদের দল নিজেরাই রাধাকৃষ্ণ সেজে রাসলীলা করতে পারে ? বা রাধাকৃষ্ণ তত্ত্ব সম্বন্ধে বাজে কথা বলতে পারে ।