Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

অহিংসা পরম ধর্ম (পর্ব-২)

 


অহিংসা হচ্ছে-‘অহিংসাং ভুত্বেস্বদ্রোহম্।' শ্রীধর॥ 'অহিংসাম্ দ্রোহম্ । অহিংসাঞ্চ'- ভাঃ ১১/৩/২৫৷ 'অহিংসা'—গী. ১৬/৩॥

অর্থাৎ অহিংসা হচ্ছে ভূতগণের প্রতি অদ্রোহ, প্রাণীমাত্রের অনিষ্ট চিন্তা না করা।
বেদেও বলা হয়েছে—'মা হিংসাৎ সর্বভুতানি' অর্থাৎ কোন জীবের প্রতি হিংসা করো না।
👉নিচে আরও অহিংসার বিবরণ দেওয়া হচ্ছে।
চৈতন্যশিক্ষা মতে, উদর পরায়ণ ব্যক্তিগণ স্বার্থ-বশতঃ যে পশুহিংসার বিধান করে, তা কেবল মানবের অপকৃষ্ট পাশব প্রবৃত্তির পরিচালনা মাত্র। পশুহিংসা হতে বিরত না হলে নর স্বভাব উজ্জ্বল হয় না। ... ফলতঃ পশুহিংসা পশুর ধর্ম, নরধর্ম নয়।' চৈ.শি. ২/৫
ত্রেতাযুগের যুগধর্ম ছিল যজ্ঞ। সে কালে অশ্বমেধ-গোমেধ যজ্ঞ দ্বারা ভগবৎ আরাধনা করা হত। তখনকার ঋষিরা এতদূর ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন যে, যজ্ঞে পশুহত্যা করে আবার তাদের পুনর্জীবিত করতেন।
বর্তমান কলিযুগ হওয়ায় এ যুগের যুগধর্ম কৃষ্ণনাম সংকীর্তন-এটা সর্বশাস্ত্র স্বীকৃত। কিন্তু ধর্মচ্যুত কদাচারী ব্যক্তিরা যুগধর্ম পরিত্যাগ করে যজ্ঞ, ব্রত, তপস্যা, যোগ ধ্যানাদির চেষ্টা তথা বেদকালের ঋষিদের অনুকরণ চেষ্টা যে কেবল বৃথা আস্ফালন তা প্রকৃত ভক্তমাত্রই জানেন।
নিজে হিংসা ধর্ম ত্যাগ না করলে অপরকে হিংসা থেকে বিরত করা যায় না। যখন ভারতে প্রাণী হিংসাধর্ম মাত্রা বেড়ে, যজ্ঞে পশুহিংসা করাই ধর্ম, এটাই মনে করল তখন 'অহিংসা পরমোধর্ম, মা হিংসাৎ সর্বাণি ভুতানি' এই বেদোক্তবাণী প্রচার করলেন শক্তাবেশ অবতার বুদ্ধদেব। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর অধস্তনেরা বুদ্ধের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে বেদ বিরোধী হয়ে পড়েন। তবে বুদ্ধ প্রচারিত বেদ বাণীর যথার্থ অর্থ শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ হয়েছে এভাবে—
অহস্তানি সহস্তানামপদানি চতুষ্পদম্ ৷
ফল্গুনি তত্র মহতাং জীবো জীবস্য জীবনম্।।
অর্থাৎ এই হিংসাময় সংসারে জীব মাত্রেই পরস্পর হিংসাধর্মে অবস্থিত। কাল কর্ম গুণাধীন বলে হস্তরহিত পশু সকল হস্তযুক্ত মানব গণের হিংসার যোগ্য। পদরহিত তৃণসমূহ চতুষ্পদ পশুর ভক্ষ। ক্ষুদ্র জীবকে হিংসা করেই মহাজীব বেঁচে থাকে। হিংসা ছাড়া পৃথিবীতে কারও জীবন থাকবার উপায় নেই।
হিংসা ধর্মে অবস্থিত জীবগণ পরস্পর কলহ, মারামারি, কাটাকাটি করেই জীবনটা কেটে দেয়। কিন্তু হরিসেবায় অবস্থিত হলেই জীবের হিংসাধর্ম থেকে মুক্তি হয়। অন্য কোন চেষ্টা দ্বারা হিংসা থেকে নিস্তার পাবার উপায় নাই।' মনুসংহিতাতেও অনুরূপ উক্তি আছে। মনু-৫/২৯-৩০॥
মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে কতই না পশুহিংসা করছে তার শেষ নাই। মনসাপূজা, কালীপূজা, দুর্গাপূজা, শিবপূজাতে কতশত নিরীহ প্রাণীর প্রাণ যায়। শাস্ত্রে বলা হচ্ছে-‘যে ব্যক্তি মদ্য পান করে, তার শিব ভক্তি কোথায়? যে ব্যক্তি মাংস ভক্ষণ করে তার শিব পূজায় কি ফল? তাতে তার কোনও ফল নাই, কারণ শ্রীশংকর মৎস্য-মাংস-ভোজী থেকে অনেক অনেক দূরে থাকেন।”
ক্ব মদ্যং ক্ব শিবে ভক্তিঃ ক্ব মাংসং ক্ব শিবাচনম্ ।
মৎস্য মাংস রতানাম বৈ দূরে তিষ্ঠতি শংকর ॥ কালীখণ্ড ॥
মানুষ নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য অন্য প্রাণীকে যন্ত্রণা দেয়, হত্যা করে কিন্তু নিজে একটা মশার কামড়ও সহ্য করতে পারে না। এটা অহিংসা নীতি নয়।
‘অহিংসা’র অর্থ হচ্ছে কোন জীবের জীবনের ক্রমোন্নতি রোধ না করা। কারও এটা মনে করা উচিত নয় যে, দেহকে হত্যা করলেও যখন আত্মার বিনাশ হয় না, তখন ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য পশু হত্যা করলেও কোন ক্ষতি নেই।
যথেষ্ট পরিমাণে শস্য, ফল এবং দুধ থাকা সত্ত্বেও এখনকার মানুষেরা পশুমাংস আহার করছে। পশুহত্যা করার কোনই প্রয়োজন নেই। এই নির্দেশ সকলের জন্য। ... যারা আত্মতত্ত্ব জ্ঞানলাভের পথে উন্নতি সাধন করতে চান, তাদের পক্ষে পশু হত্যা করা উচিত নয়।
যথার্থ অহিংসা হচ্ছে কারোরই জীবনের প্রগতি রোধ না করা। বিবর্তনের মাধ্যমে পশুরও এক পশু দেহ থেকে অন্যপশু দেহে জন্মান্তরিত হয়ে এগিয়ে চলেছে। কোন পশুকে যখন কোন নির্দিষ্ট শরীরে কোন নির্দিষ্ট কাল অবস্থানের মেয়াদ থাকে তখন যদি তাকে অপরিণত অবস্থায় হত্যা করা হয়, তাহলে তাকে বাকি সময়টা পূর্ণ করে উন্নততর যোনিতে (প্রজাতিতে) উন্নীত হওয়ার জন্য আবার সেই শরীর প্রাপ্ত হতে হয়।
সুতরাং কেবল মাত্র জিহবার তৃপ্তির জন্য ওদের প্রগতি রোধ করা উচিত নয়। একেই বলা হয় অহিংসা। ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য-গী. ১৬/৩॥
এছাড়া অহিংসানীতির প্রধান প্রচারক বুদ্ধদেব তিনি মূর্খ পণ্ডিতদের ব্যাখ্যার ন্যায় অহিংসার বাণী প্রচার করেন নি। তিনি অহিংসার বাণী প্রচার করেন এবং বেদ-বিহিত পশুবলিরও নিন্দা করেন।
বুদ্ধদেব যখন আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন মানুষ অত্যন্ত নাস্তিক হয়ে গিয়েছিল। তারা মাংসাহার প্রিয় এবং বৈদিক যজ্ঞের নামে সব জায়গাই কসাই খানাতে পরিণত হয়েছিল। তখন অবৈধভাবে অসংখ্য পশুবলি হচ্ছিল। নিরীহ পশুদের প্রতি সদয় হয়ে ভগবান তখন শ্রীবুদ্ধদেবরূপে অহিংসার বাণী প্রচার করেছিলেন। তিনি প্রচার করেছিলেন যে, তিনি বৈদিক নির্দেশ মানেন না এবং পশুহত্যার ফলে মনোবৃত্তি যে কিভাবে কলুষিত হয়ে যায়, সে কথা তিনি মানুষদের বুঝিয়েছিলেন।
তিনি এইভাবে ভগবত্তত্ত্বজ্ঞানবিহীন নাস্তিকদের বিমোহিত করেছিলেন। এই সমস্ত নাস্তিকেরা, যারা তাঁকে অনুসরণ করেছিল তারা ভগবানকে মানত না, কিন্তু তারা তাঁকে পূর্ণরূপে মেনেছিল এবং তাঁর প্রতিশ্রদ্ধা যুক্ত হয়েছিল। যিনি নিজেই ভগবানের অবতার।
এইভাবে বুদ্ধরূপে তিনি অবিশ্বাসী নাস্তিকদের আস্তিকে পরিণত করেছিলেন।” বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পূর্বে পশুবলিই ছিল সমাজের সব চাইতে লক্ষণীয় আচরণ। লোকেরা দাবী করত যে, বৈদিক নির্দেশ অনুসারে সেই সমস্ত পশুবলি হচ্ছে। আদর্শ পরস্পরার মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞান লাভ না হলে বেদের অনিয়মিত পাঠক তার আলঙ্কারিক ভাষার প্রভাবে বিপথগামী হয়।
ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে, এই ধরনের তত্ত্বজ্ঞান বিহীন তথাকথিত পণ্ডিতেরা যারা তত্ত্বদ্রষ্টা শুরুর কাছ থেকে পরম্পরা ধারায় এই অপ্রাকৃত বাণী গ্রহণ করতে চায় না, তারা অবশ্যই মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাঁদের আচার অনুষ্ঠানগুলির ঊর্ধ্বে বেদের মুখ্য তত্ত্ব সম্বন্ধে তারা সম্পুর্ণ ভাবে অজ্ঞই থেকে যায়। তাদের জ্ঞানের কোন গভীরতা নেই। ......
আসুরিক ভাবাপন্ন এই ধরনের বিভ্রান্ত মানুষদের কাছে বুদ্ধদেব হচ্ছেন আস্তিকতার প্রতীক। তাই তিনি সর্বপ্রথমে তাদের পশুহত্যা করা থেকে বিরত থাকেন। ভগবৎ চেতনা বিকাশের পথে পশুহত্যা হচ্ছে সবচাইতে ভয়ঙ্কর প্রতিবন্ধক।'
‘মহারাজ পরীক্ষিৎ বলেছেন যে, পশুঘাতীরা কখনও পরমেশ্বর ভগবানের দিব্য মহিমা আস্বাদন করতে পারে না। তাই মানুষকে যদি ভগদ্ভক্তির পথে পরিচালিত করতে হয়, তা হলে সর্বপ্রথম তাদের পশুহত্যা থেকে বিরত করতে হবে।
যারা বলে যে পশুহত্যার সঙ্গে পারমার্থিক প্রগতির কোন সম্বন্ধ নেই, তারা এক একটি মূর্খ। এই ভয়ংকর মতবাদের প্রভাবে কলির চেলা কয়েকজন তথাকথিত সন্ন্যাসী বেদের নাম করে পশুহত্যায় লিপ্ত হচ্ছে এবং অন্যদের সেই কাজে উদ্বুদ্ধ করছে।...
বেদে যে পশুবলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার সঙ্গে কসাইখানায় অবিধিপূর্বক যে পশুহত্যা হচ্ছে তার পার্থক্য অনেক। অসুরেরা অথবা তথাকথিত বেদজ্ঞরা বেদে পশুবলির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে, কিন্তু সেই পশুবলি যে প্রকৃতপক্ষে কি তা তাদের জানা নেই।
তাই বুদ্ধদেব আপাত ভাবে বেদকে অস্বীকার করেছিলেন। পশুহত্যা জনিত প্রচণ্ড পাপ থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য এবং যে সমস্ত মানুষ মুখে বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, শান্তি, সাম্য এবং স্বাধীনতার বাণী আউড়ে কাজের বেলায় নৃশংসভাবে নিরীহ পশুদের হত্যা করে, তাদের হাত থেকে পশুদের রক্ষা করার জন্য বুদ্ধদেব এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
যেখানে পশুহত্যা হয়, সেখানে ন্যায় নীতির কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। বুদ্ধদেব সর্বতোভাবে এই পশুহত্যা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর এই অহিংসার বাণী প্রচারিত হয়েছিল।'
'বুদ্ধদের যে অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন তা ধর্ম নয়, তা হচ্ছে ধার্মিক মানুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এটি সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক ধর্ম, কেননা তার দ্বারা মানুষকে উপদেশ দেওয়া হয় অন্য কোন পশু অথবা জীবের অনিষ্ট সাধন না করতে, কেননা যে অন্যের ক্ষতি সাধন করে তারও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি হয়। ভক্তিবেদান্ত তাৎ-ভাঃ ১/৩/২৪; ২/৭/৩৭৷
আজকাল তথাকথিত অনেক নব্য পণ্ডিত গজিয়েছেন তারা বলেন -মাছ-মাংস খেলে কিছু দোষ হয় না! এটি তাদের মনগড়া বাক্য ছাড়া আর কিছুই নয়।
কোন সতীসাধ্বী নারী যদি বলে—‘পরপুরুষের সঙ্গ করলে কিছু দোষ হয় না। তবে বেশী করো না। তবে বুঝতে হবে তার নারীত্বে ভেজাল আছে। সতীত্বে সন্দেহ আছে, দোষ আছে।
মাছ-মাংস খেলে কিছু দোষ হয় না- তাদের এই বক্তব্য দােষ যুক্ত। প্রাণী হিংসাই হচ্ছে পাপ যুক্ত।
তাদের আরও বক্তব্য হচ্ছে-'মনুসংহিতায় বলছেন-এই এই মাছ খাবে, এই সকলের মাংস খাবে আর এই এইগুলি খাবে না।' এর জবাবে বলতে চাই আপনারা মনুসংহিতার দোহাই দিয়ে সম্পূর্ণ অসত্য কথা বলেছেন। মনুসংহিতায় মাছ-মাংস খাওয়ার কোন সরাসরি বা প্রত্যক্ষ নির্দেশ নাই । সাধারণ লোকদের মূর্খ না ভাবলে ঐরকম মিথ্যা ভাষণ প্রদান করা যায় না। তাছাড়া কোন কোন মাছ আর কার কার মাংস খাওয়া যাবে তারা তা উল্লেখ করেন না। এবার মনুসংহিতা কি বলছেন তা দেখা যাক্।
মনু পুত্র ভৃগু মনুসংহিতার ৫/১৬ শ্লোকে বলছেন—'পাঠীন, রোহিত, রাজীব, শকুল, মৎস্য, আঁইশ বিশিষ্ট মৎস্য ভক্ষণ করতে পারে। তবে সকল ভক্ষ দ্রব্যই দেবোদ্দেশে উৎসর্গ করে তবেই ভোজন করতে পারে।'
আর 'পঞ্চনখের মধ্যে শজারু, শল্যক, গোসাপ, খড়গ, (মৎস্যাকৃতি জলচর বিশেষ), কচ্ছপ এবং খরগোস এই ছয়টি ভোজন করা যায়। মনু. ৫/১৮॥
মাংস ভোজন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ‘যজ্ঞের হুতাবশিষ্ট মাংস ভক্ষণ করতে পারে। বহু ব্রাহ্মণের অনুরোধে মাংস ভক্ষণ করা যায়। ব্যাধি হেতুক বা আহার অভাবে প্রাণ যায় যায় এমন পরিস্থিতিতে মাংস খেতে পারে।' মনু ৫/২৭ ॥
যে মাংস মন্ত্র দ্বারা সংস্কৃত হয় নাই তা ভোজন করবে না। মনু. ৫/৭ ॥ চড়ুই, কাক, হাঁস, মুরগী, চক্রবাক, সারস, রজ্জুবাল, ডাক, টিয়া, শালিক ভক্ষণ করবে না। মনু. ৫/১২ ॥ যে সকল মাংস বিক্রয়ার্থ প্রস্তুত থাকে তা ভোজন করবে না। মনু. ৫/১৩ ॥
বক, বলাকা (ক্ষুদ্ৰবক), দাড় কাক, খঞ্জন, মৎস্য ভক্ষক জন্তু, শূকরাদি এবং সর্ব প্রকার মৎস্য ভোজন করবে না। মৎস্যাদান বিড় বরাহাংশ মৎস্যানেব চ সর্বশঃ। মনু. ৫/১৪ ॥ যে যার মাংস খায় তাকে তন্মাংস খাদক বলা হয়। কিন্তু যে মৎস্য ভোজন করে তাকে সর্বমাংস ভোজী বলা হয়। কেননা মৎস্য ছাগ শূকরাদি যাবতীয় প্রাণী মাংসই ভোজন করে, তাই এক মৎস্য ভোজনে সর্ব মাংস ভোজন করা হয়। সেই জন্যে সকল প্রকার মৎস্য ভোজন সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করবে।
যে যস্য মাংস মশ্নাতি স তন্মাংসাদ উচ্যতে।
মৎস্যাদঃ সর্বমাংস্যাদস্তম্মান্মৎস্যান বিবর্জয়েৎ। মনু. ৫/১৫
অন্যত্র বলা হচ্ছে-ইচ্ছাপূর্বক মৎস্য ভক্ষণ করলে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তিন দিন উপবাস। অজ্ঞানবশত ভক্ষণ করলে দেড় দিন উপবাস থাকতে হবে।
মৎস্যাংশ্চ কামতোজগ্ধা সোপবাসস্ত্রহং রসেৎ। অজ্ঞানতস্তদধর্ম ॥ শব্দকল্পদ্রুম্ ॥
এ পর্যন্ত জানা গেল যে, মনুসংহিতায় মাছ-মাংস খাওয়ার সরাসরি কোন অনুমোদন নাই। এমনকি রসুন পেঁয়াজ পর্যন্ত খাওয়ার কোন অনুমোদন নাই মনুসংহিতায়। মনু. ৫/৫
পরোক্ষভাবে যে অনুমোদন আছে তা কেবল বৈদিক যজ্ঞের হুতাবশিষ্ট মাংস, যে মাংস মন্ত্র দ্বারা সংস্কৃত করা হয়েছে কেবল তা ভোজন করা যেতে পারে। আর তথাকথিত নব্য পণ্ডিতগণ ঢালাওভাবে মাছ মাংস খাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আর আজকাল বৈদিক যজ্ঞে আহুতি প্রদানের মাধ্যমে মাছ মাংস সংস্কৃত করবেন এমন শক্তিশালী পুরোহিত বা ব্রাহ্মণ ঠাকুর কোথায়? তাছাড়া মাছ-মাংস খাওয়ার আগে যদি শতশত টাকা খরচ করে যজ্ঞ করতে হয় তবে জগতে আর ক’জন মানুষ মাছ মাংস খেতে চাইবে?
কেবল যজ্ঞের মাধ্যমে মাছ-মাংস খাওয়ার যে নির্দেশ তা শাস্ত্রকার এবং মুনি ঋষিদের একটা কৌশল, যাতে মানুষ প্রাণী হত্যা থেকে বিরত হয়।
বহু ব্রহ্মাণের অনুরোধে মাংস ভক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এখন মাংস খাওয়ার জন্য কাউকে অনুরোধ করা হয় কি? মানুষ আপন ইন্দ্রিয় তাড়নায় জিহ্বার লালসায় মৎস্য-মাংস ভক্ষণ করে।
এমনকি প্রায় ব্রাহ্মণেরা নির্বিচারে মাছ-মাংস ভক্ষণ করে থাকে। আহারের অভাবে মাংস খাওয়ার যে অনুমোদন বর্তমানে এমন কি দেশে পরিস্থিতি হয়েছে যে আহারের অভাবে মানুষ মাছ-মাংস খাচ্ছে? বরং যারা অধ্যাহারে অনাহারে থাকে তাদের অনেকের পোড়া কপালে মাছ-মাংসাহার জোটেই না।
হাঁস মুরগী খাওয়া তো একেবারেই নিষিদ্ধ হয়েছে। মনু. ৫/১২ ॥ আর মাংস বাজারে ক্রয় করা ছাড়া আর কোথায় পাবেন? কেননা বিক্রয়ের জন্য যে মাংস কসাইখানায় পাওয়া যায় তা তো খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মনু. ৫/১৩
এবার তাহলে তারা কি বাড়িতে বাড়িতে বাসায় বাসায় পশুহত্যা যজ্ঞের বেদী নির্মান করতে বলবেন? আর মাছ যদিও বা নদী-নালা খাল-বিল-ঝিল হাওর-বাওর-সাগর সবখানেই পাওয়া যায় কিন্তু মাছ খাওয়ার তো কোনও অনুমতি শাস্ত্রে নেই। মনু. ৫/১৫ ॥ এবার শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত মানবেন না নব্য তথাকথিত পণ্ডিতগণের ফতোয়া মানবেন?
আরও দেখুন মনুসংহিতা কি বলছেন-রসুন, পেয়াজ মুরগী এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ করলে কঠোর চন্দ্রায়ন ব্রত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মনু. ৫/২০
শরীরের পুষ্টিসাধন বা ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য যে মাংস ভক্ষণ তা রাক্ষসের কর্ম মাংসাহার রাক্ষসোচিত ব্যবহার। মনু. ৫/৩১ । যেই পশুর মাংস ভক্ষণ করা হবে সেই পশু পরকালে ভক্ষণকারীকে ভক্ষণ করবে। মনু. ৫/৩৩ ॥ মাংস খাদকদের পরলোকে পাপের ফল ভোগ করতে হবে। মনু. ৫/৩৪
মাংস ভোজনকারীরা বিংশতি জন্ম পশুযোনি প্রাপ্ত হবে। মনু ৫/৩৫। পশুর গায়ে যত লোম থাকে পশুহত্যাকারীকে ততবার জন্য জন্মান্তরে হত হতে হয়। মনু, ৫/৩৮ ॥ যারা আত্ম সুখোচ্ছার বশবর্তী হয়ে হিংসাশূণ্য নিরীহ জীবদের হত্যা করে তারা জীবিতাবস্থায় কি মৃত্যুর পর কখনও সুখ লাভ করতে পারে না।
স জীবংশ্চ মৃতশ্বৈব ন ক্বচিং সুখ মেধতে। মনু. ৫/৪৫
আর যারা জীবদের বধ বঞ্চনাদি ক্লেশ প্রদান করে না, সকল জীবের হিতাকাক্ষী তারাই সুখ সম্ভোগ করেন। সুখমত্যন্ত মশুতে ॥ মনু. ৫/৪৬ ॥ জীব হিংসা না করলে মাংস পাওয়া যায় না, জীবহত্যা কোনভাবেই স্বর্গজনক নয়। তাই মাংস ভোজন সর্বতোভাবে বর্জন করবে।
ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গস্তস্মন্মাংস বিবর্জয়েৎ॥ মনু. ৫/৪৮
প্রাণী হত্যা করে মাংস পেতে হয়, তাতে নিরীহ প্রাণীদের বন্ধন জনিত, হত্যাজনিত যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়—এই সমুদয় পর্যালোচনা করে কি বৈধ (যজ্ঞে আহুতিকৃত মাংস), কি অবৈধ (যজ্ঞাগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয় নাই) সকল প্রকার মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত হওযা কর্তব্য। মনু. ৫/৪৯ । আরও বলা হচ্ছে— ‘মাংস’ ভক্ষণকারীরা পিশাচের ন্যায়। মনু. ৫/৫০
‘মাংস’ যক্ষ, রাক্ষস এবং পিশাচদের খাদ্য । মনু. ১১/৯৬ ॥ ‘মাং’-অর্থাৎ আমাকে, ‘স-অর্থ সে; অতএব ‘মাংস’ অর্থ হচ্ছে এজগতে আমি যার মাংস খাচ্ছি পরজগতে সে আমার মাংস খাবে। মনিষীরা ‘মাংস’ শব্দের এই অর্থ করেছেন। মনু. ৫/৫৫
শাস্ত্রের এই সিদ্ধান্তগুলিই প্রমাণ করে যে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, এবং শাস্ত্রের সাথে মুনি ঋষিদের সিদ্ধান্তের সাথে বিরোধিতা করেছেন।
👉প্রশ্ন-মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন না-কি তথাকথিত ভন্ড ও মূর্খ পণ্ডিতগণ মানুষদের বিভ্রান্ত করছেন?
মনুসংহিতা শাস্ত্রে পরিষ্কার বলা হচ্ছে মাংস ভোজনকারী ইহকাল পরকাল কোনকালেই সুখ শান্তি পাবে না, পরকালে পশুযোনি প্রাপ্ত হবে, হত প্রাণী দ্বারাই পরকালে হত হবে, হত প্রাণীর দেহে যত লোম আছে ততবার হত হতে হবে।
মাংস ভূত পিশাচদের খাদ্য তাই মাংস ভোজন সর্বতোভাবে বর্জনীয়। আর মাছ যেহেতু সকল প্রাণীর মাংসই ভক্ষণ করে তাই মাছ খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ।
তারা ‘সংযম এবং পবিত্রতা'র কথা বলেন। আবার সাথে মাছ মাংস খাওয়ার কথাও বলেন। মাছ-মাংস খাওয়ার সাথে সংযম নীতি কিভাবে মিলানো যায়? তাছাড়া মাংস স্বভাবতই অপবিত্র সেই অপবিত্র মাংস খেয়ে কিভাবে পবিত্রতা রক্ষা করা যায় সেই উদ্ভট সূত্র কিন্তু তারা প্রদান করেন না। রসুন, পেয়াজ, মাছ, মাংস এসব উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ করব আর ইন্দ্রিয় সংযমের দোহাই দেব এটা কপটতা, মিথ্যাচার।
মাছ-মাংসভোজী গণ্ডমূর্খ পণ্ডিতগণ আবার প্রচার করে মাছ মাংস খেয়েও ইন্দ্রিয় সংযত রাখা যায়-এটা তাদের সর্বোচ্চ ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
অনেক ভন্ড মূর্খগণেরা বাঘ আর চূড়ই পাখীর দৃষ্টান্ত দেয়। বাঘ মাংস ভোজী কিন্তু বহুদিন পর মৈথুনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় আর চড়ুই পাখি নিরামিষ খেয়েও সে নাকি ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে তিনশ বার মৈথুনে লিপ্ত হয়। আর তাতেই মুর্খরা হাসে, বিষয়ীরা বিষয় কামে প্রমত্ত হয়। কিন্তু বেদ বলেছেন—
আহার শুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ সত্ত্বশুদ্ধৌ।
ধ্রুবা স্মৃতিঃ স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্ৰন্থীনাং বিপ্ৰমোক্ষঃ॥ ছা. ৭/২৬/২ ॥
কেবল সাত্ত্বিক আহার গ্রহণের দ্বারাই সত্ত্বা পবিত্র হয়। ‘সত্ত্বা' শব্দে শরীর এবং মনকে বুঝায়। আর শরীর এবং মন পবিত্র হলে স্মৃতিও পবিত্র হয়। স্মৃতি পবিত্র হলে পারমার্থিক প্রগতি লাভের বা মোক্ষলাভের পথ, সঠিক পথ পাওয়া যায়। তখন সর্বগ্রন্থীর ছিন্ন হয়।
শুদ্ধ আহার বা সাত্তিক আহার গ্রহণের প্রয়োজন এই জন্যেই যে খাদ্যবস্তু ভোজনের পর তিনভাগে বিভক্ত হয়। খাদ্যের স্থূল অংশ মলরূপে পরিত্যাক্ত হয় । মধ্যম অংশ শরীরের মাংস গঠন করে। আর সূক্ষ্মতম অংশ দ্বারা তৈরি হয় মন। ছা. ৬/৫/১॥
সুতরাং যে যেমন খাদ্য গ্রহণ করবে তার মনতো সেভাবেই তৈরি হবে। এটা বেদেরই কথা। পেয়াজ খেলে কি পায়েসের ঢুেকর বের হয়? মাংস পোড়ালে কি ধুপের ঘ্রাণ আসে?
বেদ বললেন পরিশুদ্ধ বা সাত্ত্বিক আহার গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল ইন্দ্রিয় সংযত করা যায়। এবং পবিত্র হওয়া যায়। আর তাদের কথা হচ্ছে মাছ-মাংস খাও এটা বড়ো কথা নয়। আসল কথা সংযম এবং পবিত্রতা এবার দেখুন বিভ্রান্তে কে পতিত?
ভগবদগীতার (১৬/১০) এই শ্লোকে 'অশুচিব্রতা' কথাটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। জগতে অসুর স্বভাব সম্পন্ন অনেক লোক আছে যারা মাছ, মাংস, মদ্য, স্ত্রীলোক এবং জুয়াখেলার প্রতি আসক্ত থাকে। তাদের আসক্তিই হচ্ছে অশুচিকার্য বা অশুচিব্রত।
অশুচিকার্যে ব্রতী তাই অশুচিব্রতাঃ। এই সমস্ত লোকেরা দম্ভ এবং ভ্রান্ত সম্মানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কতকগুলি ধর্ম মত তৈরী করে যা বৈদিক শাস্ত্র অনুমোদিত নয়। যদিও এই ধরনের আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষেরা এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জঘণ্য শ্রেণীর জীব, তবুও কৃত্রিম উপায়ে এই জগৎ তাদের জন্য মিথ্যা সম্মান তৈরি করেছে। যদিও তারা নরকের দিকে এগিয়ে চলছে, তবুও তারা নিজেদের খুব উন্নত বলে মনে করে।' ওরা এও জানে না যে, ওদের নরক ভোগের পর স্থাবর যোনি প্রাপ্ত হতে হবে। ভা. ১১/১০/২৬-২৭ ৷৷
তারা আরও উল্লেখ করেন-‘বেদ কালেতে তো যজ্ঞে পশু বলি দিয়ে মাংস খেতো এই রীতি ছিলো। বৈদিক সমস্ত যজ্ঞেই প্রায় পশু বলি দেওয়া হতো। বেদশাস্ত্র পরিষ্কার বলছেন এই এই জিনিস খাবে এই গুলি খাবে না।' তাদের প্রশ্ন করি—এখনকার দিনে কেউ কি যজ্ঞে পশুবলি দিয়ে মাংস খায়?
পূর্বে তিনি মনুসংহিতার দোহাই দিয়ে মাছ মাংস খাওয়ার কথা বলেছেন, এবার বলছেন বেদের দোহাই দিয়ে। চঁাদ কাজী মহাপভু শ্রীগৌরাঙ্গকে বলেছিলেন—
‘তোমার বেদেতে আছে গোবধের বাণী।
অতএব গোবধ করে বড় বড় মুনি॥
মহাপ্রভু তদুত্তরে বলেছেন--
'জিয়াইতে পারে যদি তবে মারে প্রাণী।
বেদ পুরাণে আছে হেন আজ্ঞা বাণী।।
জরদগব হঞা যুবা হয় আর বার।
তাতে তার বধ নহে, হয় উপকার।।
(চৈ. চ. আদি. ১৭/১৫৮, ১৬০-১৬২)
অর্থাৎ বেদ পুরুষ শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু বললেন-বেদ এবং পুরাণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কেউ যদি কোন প্রাণীকে নবজীবন দান করতে পারে, তাহলে সে-ই প্রাণী মারতে পারে। তাই মুনি ঋষিরা অতিবৃদ্ধ জরদগব পশুদের কখনও কখনও মেরে বৈদিক মন্ত্রের সাহায্যে তাদের নবজীবন দান করতেন। এই ধরনের বৃদ্ধ এবং পঙ্গু জরদগব পশুদের যখন এইভাবে নবজীবন দান করা হতো তাতে তাদের বধ করা হতো না, পক্ষান্তরে তাদের মহা উপকার সাধন করা হোত।'
‘যজ্ঞে পশুবলির নির্দেশ বৈদিক শাস্ত্রে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু পশু হত্যা করার কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। যজ্ঞে বলি দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে পশুটিকে নবজীবন দান করা। কখনো কখনো যজ্ঞে বলি দেওয়ার মাধ্যমে পশুটিকে তৎক্ষণাৎ মনুষ্য জীবনের শরীরাকৃতি দিয়ে উন্নত করা হত।'
যজ্ঞে পশু বলির এই তাৎপর্য। যদি প্রাণ দিতে পারে তবেই যজ্ঞে বলি দিতে পারে। কিন্তু ভন্ড পিশাচগুণ সম্পন্ন লোকেরা মাছ-মাংস-খাওয়া নির্দোষ এবং যজ্ঞে পশুবলি দানের যে বক্তব্য পেশ করেছেন তা উস্কানীমূলক এবং অশাস্ত্রীয়।
মনুসংহিতাতে বলা হয়েছে-ঐভাবে যজ্ঞে পশুবলি দেওয়ায় তা বধজনিত কোন পাপ হতো না। যজ্ঞের পশু উচ্চযোনি প্রাপ্ত হতো। পশুদের কল্যাণ হতো। মনু ৫/৩৯-৪০৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গ বলেছেন—'কলিকালে তৈছে শক্তি নাহিক ব্ৰাহ্মণে । (চৈ. চ. আদি. ১৭/১৬৩)
কলিকালে যজ্ঞে পশুবলি দিয়ে সেই পশুকে নবজীবন দান করবে এইরূপ শক্তিশালী ব্রাহ্মণ কলিকালে নাই। সুতরাং যজ্ঞে কিভাবে পশুবলি প্রদান করবে? কে করবে?
কিন্তু তবু কতক ধূর্ত কপট নির্বিচারে, কেউবা বেদ শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে, কেহ কেহ ইতর দেব-দেবীর দুয়ারে বলি দিয়ে ছাগ মাংসাদি নৈবেদ্য পাওয়ার আশায় মেতে উঠে । বিভিন্ন অজুহাতে মাছ মাংসাদি খাওয়ার যে কু-প্রচার চলছে তাতে ব্যক্তি স্বার্থ, কোন তথাকথিত ধর্মীয় সংস্থার স্বার্থ তথা লোকসংখ্যা বাড়তে পারে কিন্তু তাতে পারমার্থিক কোন লাভ হয় না। পরন্তু লোককে নরকে এবং নিম্ন যোনিতে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করা হয়।
সাধারণে জানেন না বেদে এবং মনুসংহিতায় কি নির্দেশ আছে, কিভাবে আছে । লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে দু'একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যারা মনুসংহিতা পড়েছেন এবং বেদ চোখে দেখেছেন।
“পূর্বে নর বলি হতো। মানুষ যখন একটু সভ্য হল, সমাজে মানুষের উপকারিতা আছে বুঝল, তখনই নর হত্যা ছেড়ে দিল। মানুষ যে এখনও কতদিনে সভ্য হয়ে ছাগবলি, মহিষবলি প্রভৃতি উঠায়ে দিবে তা বলা যায় না।
বলিদান প্রথা যাতে দেশ হতে একেবারেই উঠে যায়, তজ্জন্য প্রত্যেক পরদুঃখ দুঃখী মানুষের সংঘবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করা আবশ্যক।
....হরেকৃষ্ণ....

(Courtesy by - ব্রজের কোকিল)