Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য (পর্ব-১)

 


👉কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এ পৃথিবী ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। বেদে বিজ্ঞানের বিষয়ে কি বলে। জ্ঞান পিপাষু মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা! সৃষ্টির এই নিগুঢ় তত্ত্ব নিয়ে পবিত্র বেদ এর বিখ্যাত নাসাদিয় সুক্ত এবং হিরন্যগর্ভ সুক্তের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত সারবস্তু ও বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু মন্ত্র:-

👉১ :

"নাসাদাসিন্নো সদাসিত্
তদানীম নাসিদ ঢ়জ ন ব্যোমা পরো
যৎ...শার্মন্নম্ভঃ কিম আসীদ ঘনং গভীরম্।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল-১০/সুক্ত-১২৯/মন্ত্র-১

অর্থঃ- শুরুতে কোন অস্তিত্ব(সৎ) বা অনস্তিত্ব   (অসৎ) ছিলনাসেখানে ছিলনা কোন শুন্যস্থান না
কোন পদার্থ,কোন কণা,না কিছুই না!কেনই বা ওই  গভীর অন্ধকার তৈরী হয়েছিল?কেনই বা সৃষ্টি হল ওই তরলের?কার জন্য?"


ঋগবেদ ১০/১২৯/৩ "তম অসিৎ তমসা...
তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম্
ঋগ্বেদ- মন্ডল-১০/সুক্ত-১২৯/মন্ত্র-৩
"এই সমস্ত বিশ্বের সৃষ্টির পূর্বে সব ই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন,শুধুই অন্ধকার,অন্ধকারের চেয়েও যেন অন্ধকারসেখানে তাপের সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত উদ্ভূত হল   "একইভাবে,

ঋগবেদ ১০/১২১/১ "হিরন্যগর্ভ  সমবর্ততাগ্রে.." "প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল"
ঋগবেদ ১০/১২১/৭ "আপো হ য়দ  বৃহতির্বিশ্বম আয়ন গর্ভম জনয়ন্তীর অগ্নিম্
.
অর্থ:- সেই হিরন্যগর্ভে ছিল আয়নযুক্ত উত্তপ্ত  তরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ..." একই
ধরনের কথা বলছে শতপথ ব্রাক্ষ্মন ১১.১.৬.১
"হিরন্যগর্ভানি অপঃ তে সলিলা..." "প্রথমে  হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহলসেখানেছিল উত্তপ্ত গলিত
তরল,তরলের যেন এক সমুদ্র!যেন একটি ডিমের মত যা ছিল মহাশুন্যে ভাসমানবছরের পরবছর এই
অবস্থায় অতিক্রান্ত হয়।এই হিরণ্যগর্ভের বাংলা নাম স্বর্ণডিম্ব, ইংরেজিতে বলে Golden Egg .

ঋগবেদ ১০.৭২.২
“তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে,বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল”


ঋগবেদ ১০.৭২.৩
“সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ,নক্ষত্র তৈরী হল”


ঋগবেদ ১০.৭২.৪
“তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল”


ঋগবেদ ১০.৭২.৮-৯
“তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারন সম্পন্ন হল।তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।”


এই অংশটুকু পরলেই স্পষ্ট বোঝা যায় বেদের সৃষ্টিতত্ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।সৃষ্টিতত্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল “Lambda-CDM Concordance Model” অনুযায়ী “The evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উত্থান।” এছাড়া বেদএ উল্লেখিত বিস্ফোরণ বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত বিগ ব্যাংগ তত্তের সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়।বেদ এর মতে সৃষ্টির শুরুতেই ওঁম উচ্চারিত হয় আর এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরন ।
বেদান্ত সূত্র(4/22) “অনাবৃতিঃ শব্দহম” অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু যা মাত্র দুই বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন।
এই শব্দ তরঙ্গকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় Cosmic sound wave বলা হয়। ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনা এর এস্ট্রোনমির প্রফেসর ডেনিয়েল জে আইনস্টাইন এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যার প্রফেসর চার্লস বার্নেটের সম্মিলিত আর্টিকেল “Cosmic sound wave rules” থেকে কি করে এই শব্দের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হল তার ব্যখ্যা দেয়া হল। আমরা জানি যে সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব ছিল একটি ঘন,উত্তপ্ত পিন্ড(বেদের ভাষায় হিরন্যগর্ভ বা হিরন্ময় ডিম)।
এই পিন্ডের মধ্যস্থিত পদার্থসমূহকে Cosmologist রা দুই ভাগে ভাগ করেন-Baryonic&Non-baryonic.Baryonic পদার্থ হল ইলেকট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন।এইসময় এরা সকলেই ছিল আয়নিত অবস্থায়। প্রসারন শুরু হবার জন্য মূল ভূমিকা ই ছিল এই উত্তপ্ত ও আয়নিত Baryonic পদার্থগুলোর মধ্যস্থিত ইলেকট্রনগুলোর মাধ্যমে নিঃসৃত ফোটন কনাগুলো(Compton scattering of photon from electron)।এই ফোটন কনাগুলো উত্তপ্ত প্লাসমার সাথে Baryon-photon fluid তৈরী করে।কনাসমূহের মধ্যে সংঘর্ষের কারনে এই Fluid এর সংকোচন ঘটে কিন্তু এই সংকোচিত প্লাসমাই ফোটনসমূহকে উচ্চ বেগে বিচ্ছুরিত করে।যে স্থান থেকে ফোটনসমূহ নির্গত হয়ে যায় সেই স্থান ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেখানে একটি নিম্নচাপ যুক্ত স্থান তৈরী হয় যা তার চারদিকের Fluid দ্বারা চাপ প্রাপ্ত হয়।আর এই চাপই সেই পানিতে একটি শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি করে,শুধু পার্থক্য হল এই যে এখানে কাউকে মুখে শব্দ করে তরঙ্গ তৈরী করতে হয়নি বরং ফোটন নির্গত হয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট চাপের কারনেই এই তরঙ্গের তৈরী হয়। আর বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব মতে এই শব্দ হল ওঁ! তাই বেদের সৃষ্টিতত্ত পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর Dr. Kevin Hurley বলেছিলেন
“How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only
recently discovered this using advanced equipment which didn’t exist that time!”
নোবেল লরেট Count Maurice Maeterlinck বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বলেন “A Cosmogony which no European conception has ever surpassed!”


" সৃষ্টির রচনার পূর্বে কোন জীবন বা মৃত্যু ছিল না। দিন রাত্রি ও ছিল নাকারন চন্দ্র সূর্য ও ছিল না। সেই সময় সৃষ্টিবিসৃষ্টি ও কিছু জানার যোগ্য ছিল না। অবিচল স্থিতি ছিল। সেই সময় শক্তি (Energy) অবশ্যই ছিল। শক্তি দুই প্রকার সুপ্ত শক্তি(Protentiol Energy) ও গতিসঞ্জাত শক্তি(Kinetic energy) এ শক্তি গুলি তখন ক্রিয়াশীল ছিল না। " ঋগ্বেদ ১০/১২৯/২

👉 ২:

পুমাং এনং তনুতউৎ কৃণত্তি পুমান্ বি তত্নে অধি নাকে অস্মিন্ ইমে ময়ুখা উপ সেদুরুঃ সদঃ সামানি চক্রুস্তসরাণ্যেতবে।। ঋগ্বেদ ১০/১৩০/২

ভাবার্থ- এখানে বলা হয়েছে যেশক্তি( Energy) তরঙ্গরপে প্রকট হয় এবং প্রকৃতিতে নির্মাণ কার্য শুরু হয়ে যায়। তরঙ্গ তির্যক গতিতে চলে। সেই সব তরঙ্গ প্রকৃতির সাম্যাবস্থায় পরমাণু সহ সঙ্ঘৃষ্ট হয় এবং তার সাম্যাবস্থা ভঙ্গ করে দেয়।।

👉৩:

সপ্ত য়ুঞ্জন্তি রথমেক চক্রমেকো অশ্বো বসতি সপ্তনামা
ত্রিপাভি চক্রমজরমনর্বং য়ত্রেমা বিশ্বা ভুবনাধি তস্হূঃ।। ঋগ্বেদ- ১/১৬৪/২

ভাবার্থঃ- কার্য জগতের পালক এক অতি তেজোময় ব্যক্তিত্ব তার সাত পুত্রকে আমরা দেখি। এখানে পুত্রের অভিপ্রায় প্রাণ। সেই সাত প্রাণ এক চক্রের সহিত সংযুক্ত। সে চক্র ভগ্ন বা শিথিল হয় না। চক্র অশ্ব দ্বারা চালিত। চক্রের তিন নাভি অর্থাৎ আশ্রয় স্থল

অশ্ব বলতে পরমাত্মাতিন আশ্রয় প্রকৃতিআত্মাপরমাত্মা বুঝায়। জগতে এক অশ্বই সমস্ত ভুবন পরিচালনা করছে। সাতচল্লিশ প্রাণ তাঁর সাতটি সামর্থ। এই সামর্থগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রকারে বলা যেতে পারে-(এক) পরমাণু মধ্যে ইলেক্ট্রোনের ঘুর্ণন শক্তি (Inter atomic energy), (দুই) রাসায়নিক শক্তি (Chemical energy), (তিন) অনুদের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখার শক্তি(lnter molecular dynamics), অথবা সংগঠন শক্তিএর দ্বারা শক্ত,তরল ও বায়ব্য ( Solids Liquids, Gasses) অবস্থা উৎপন্ন হয়। ( চার) ভূ-আকর্ষণ (Gravity), (পাঁচ) চুম্বকীয় শক্তি (Magnetism) ( ছয়) আকাশ ও শব্দ( Light and sound) (সাত) বায়ু

👉৪ :

অহস্তা যদপদী বর্ধত ক্ষা শচীভির্বেদ্যানাম্। শূষ্ণং পরিপ্রদাক্ষিণিদ্ বিশ্বায়বে নিশিশ্নথঃ।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল১০/সুক্ত২৩/মন্ত্র-১৪

বঙ্গানুবাদ:- পৃথিবী যদিও হস্তপদহীন তথাপি ইহা চলিতেছেঅবশ্য জ্ঞাতব্য পরমাণুর শক্তির দ্বারা সূর্যের চারিদিকে ইহা প্রদক্ষিণ করিতেছে। হে পরমাত্মন! সমগ্র মানবের মধ্যে আস্তিক্য বোধ জানাইবার জন্যেই তুমি এরূপ রচনা করিয়াছেন

👉৫ :

তিস্রো মাতৃস্ত্রীন্ পিতৃন্ বিভ্রদেক ঊর্ধ্বস্তস্হৌ নেমব গ্লাপয়ন্তি
মন্ত্রয়ন্তে দিয়ো অমুষ্য পৃষ্ঠে বিশ্ববিদং বাচমবিশ্বমিন্বাম্।।
ঋগ্বেদ-১১৬৪১০

অর্থ:- মাতা পৃথিবীপিতা সূর্য। প্রাণীর শরীরে তিন অংশ মাতার (পৃথিবী) থেকে আসে এবং তিন অংশ পিতা(সূর্য) থেকে আসে। মাতার দিক থেকে আসে মাটিজলবায়ু( তিনই পঞ্চভৌতিক) এবং সূর্যের দিক থেকে আসে অগ্নি ও আকাশ( এই দুটিও পঞ্চভৌতিক) পিতা অর্থাত্ সূর্য থেকে তৃতীয় যে অংশটি আসে সেটা হলো প্রাণ অগ্নিও প্রাণে পার্থক্য আছে। অগ্নি যা পিতার অংশ থেকে আসে প্রাণীর শরীর নির্মাণ হেতু উপলব্ধতা রাসায়নিক শক্তি এবং অন্তকরণ ও দশ ইন্দ্রিয় কার্য শক্তি। প্রাণ চেতনার প্রতীক
এই ভাবে প্রাণীর শরীর ছয়টি অংশ মাতার(পৃথিবী) দিক থেকে তিনটি এবং পিতার(সূর্যের) দিক থেকে তিনটি আসে তখন এর মধ্যে নিবাস করার জন্য জীবাত্মার আগমন হয়। যখন একবার এসে যায় তখন সহজে পৃথক হয় না

👉৬ :

আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদম্মাতরং পুরু। পিতরং চ প্রয়ন্ত্স্বঃ। যজুবেদ-০৩-০৬

অর্থঃ- ''গৌশব্দে পৃথিবীসূর্যচন্দ্রাদি লোক বুঝায়। এরা আপন আপন পরিধিতে(কক্ষপথে) অন্তরীক্ষে সদা ভ্রমন করে। জলকে পৃথিবীর মাতা জ্ঞান করা কর্তব্য। যেহেতু পৃথিবীজল বা অপর পরমাণু এবং পৃথিব্যাদির পরমাণুর সংযোগরূপ বিকার হতে উৎপন্ন হয়মেঘ মন্ডলস্হ মধ্যে পৃথিবী গর্ভস্হিত বীজের ন্যায় বর্তমান থাকে। এইরূপ সূর্য অগ্নিময় হওয়ায় পিতৃতুল্য এবং সেই জন্যেই যেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করে থাকে

পুনশ্চ সূর্য বা অগ্ন্যাদি রূপ তেজের পিতা বায়ু ও মাতা আকাশস্বরূপ। এই রূপে চন্দ্রের পিতা অগ্নি ও জল মাতা স্বরূপ হয়ে থাকে। এই চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে প্রদিক্ষণ করে থাকে পুনশ্চ সূত্রাত্মারূপী বায়ুর আধার ও আকর্ষণ দ্বারা সমগ্র লোকের ধারণ ও পালন হয়ে থাকে

👉
৭ :

য়ুঞ্জন্তিং ব্রধ্নমরুষং চরন্তং পরিতস্হূষঃ
রোচন্তে রোচন্তে দিবি।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল-১\সুক্ত- ৬\মন্ত্র-১।।

ভাবার্থঃ- (পরিতস্হূষঃ চরন্তং ব্রধ্নং অরুষং য়ুঞ্জন্তি) চতুর্দিকে ব্যাপকস্থির(পরমাণু) যখন ব্যাপক শক্তি( প্রাণ) সহযুক্ত হয়। (রোচনা দিবি রোচন্তে) প্রকাশমান অন্তরিক্ষে প্রকাশিত হতে হতে থাকে। অভিপ্রায় এই যেসর্বত্র বিদ্যমান সাম্যবস্থায় পরমাণু যখন পরমাত্মার শক্তি (প্রাণ) সহ সংযুক্ত হয়ে যায় তখন তারা জাগ্রত হয়ে যায়। এই জাগ্রতাবস্থা ইন্দ্রের শক্তির বাহিরে উঁকি মারার ফলে উৎপন্ন হয়


👉৮ :

য়ুঞ্জনত্যস্য কাম্যা হরী বিপক্ষসা রথে
শোণা ধৃষ্ণু নৃবাহসা।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল-১সুক্ত- ৬\মন্ত্র- ২

অর্থ-( য়ুঞ্জন্তি অস্য রথে কাম্যা হরী বিপক্ষসা। শোনা ধৃষ্ণু নৃবাহসা।) তখন এই রথের কামনা করে দুটি অশ্ব দুটি পক্ষ থেকে প্রকট হয়। এরা জাজ্বল্যমান দৃঢ়তা সহ রথে উপবিষ্ট পদার্থকে সংগে করে নিয়ে যায়
বেদে রূপকউপমা অলঙ্কার বহু প্রযুক্ত হয়েছে। এই অলঙ্কার না জেনে অনেকে বিরুদ্ধ অর্থ ব্যবহার করে। মনে রাখতে হবে বেদে স্ববিরোধিতা নেই।)
এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যেরজস্ ও তমস্ শক্তি বহির্মুখ হয়ে রথকে ইতস্ততঃ নিয়ে যায়। এগুলি ইন্দ্রের শক্তি। ইন্দ্রের তৃতীয় শক্তি তমস্ তো নিষ্ক্রিয়রজস্ ও সত্ত্ব পরমাণু সহ দৃঢ়তা পূর্বক সংযুক্ত
পরমাণুকে রথ বলা হয়েছে। ভাতরে উপবিষ্ট ইন্দ্র প্রকট হয় তা এর দুই গুন রজস্ ও সত্ত্ব রথের পার্শ্ব ভাগে প্রকট হয়। তারা রথকে দুই ভাগে অশ্বের মত রথের সংখ দৃঢ়তা সহ সংযুক্ত পূর্বক সংযুক্ত করেছে। অশ্ব কামনাকারীতারা আকর্ষন বিকর্ষন করে এবং রথ দৃঢ়তা পূর্বক সংযুক্ত রথে উপস্থিত উপ্দান পদার্থকে সংগে নিয়ে যায়
(এখানে সত্ত্ব(+) ধনাত্বক এবং রজস্(-) ঋনাত্বকঅশ্বের মত পরমাণুকে অন্তরিক্ষে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।)

👉৯:

ত্রীণি ত আহুর্দিবি বন্ধনানি তীন্যপ্সু ত্রীন্যন্ত সমদ্রে
উতেব মেরুণশ্ছনৎ স্যর্বন্যত্রা ত আহুঃ পরমং জনিত্রম্।।
ঋগ্বেদ- ১~১৬৩~

ভাবার্থঃ- দ্যুলোকে এই তিন প্রকার বন্ধনই আপঃ হয়ে যায়। হে অর্নব! আমার ছন্দ বরুন বলে। এই তিনটি পদার্থ মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ জগৎ নির্মান করে বর্তমান বিজ্ঞানে তিনটি অ্যাটমিক্ পাটিকেলস্ জগতের সৃষ্টি করে। এই তিন বন্ধনকেই অ্যাটমিক্ পাটিকেলস্ বলা হয়। বেদে এই তিন বন্ধনের নাম মিত্রবরুন ও অর্যমা। মিত্র ঋণ(-) বিদ্যুতের আবেশএকে 'ইলেক্ট্রনবলা হয়। বরুণ ধন(+) বিদ্যুতের আবেশএকে 'প্রোটনবলা হয়। আবেশরহিত অর্যমা কে বর্তমান বিজ্ঞানে নিউট্রন বলা হয়

👉১০:

য় ইন্দ্রায় বচোয়ুজা ততক্ষুর্মনসা হরী। শমীভির্য়জ্ঞমাশসত।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল-১\সুক্ত-২০\মন্ত্র-২

শব্দার্থঃ- (য়ে ঋভবঃ) যে সূর্যকিরণ গুলি (ইন্দ্রায়) শিল্প যজ্ঞের যজমান হেতু (মনসা) বিজ্ঞানের প্রয়োগ দ্বারা ( বচোয়ুজা) বলামাত্র যুক্ত হওয়ায় (হরী) ধনও ঋণ নামক দুই বিদ্যুকে (ততক্ষণঃ) রচনা করেতারা (শমীভিঃ) সে বিদ্যুতের ক্রিয়া দ্বারা (য়জ্ঞম্) শিল্প যজ্ঞাকে (আশত) ব্যাপ্ত করতে থাকে

 👉১১:

হিরণ্যগর্ভ সববর্ততাগ্রে ভূতস্য জাত পতিরেক আসীৎ
যজুর্বেদ-১৩\১৪

অর্থঃ- অগ্নীর পূর্বে জ্যোতিসূর্যের পূর্বে অগ্নি ছিল। সেই কারনে অগ্নিকে পূর্বরূপ আর সূর্যকে পশ্চাৎ রূপ বলে
কঃ স্বিদেকাকী চরতি ক উ স্বিজ্জায়তে পুনঃ যজুর্বেদ-২৩\
সূর্য একাতী চরতি চন্দ্রমা জায়তে পুনঃ। যজুর্বেদ-২৯\১০
ভাবার্থঃ- সূর্য কারও পরিক্রমা করে না। সেই নিজের অক্ষে ভ্রমনরত। চন্দ্র ও পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ভ্রমন করে


কৃষ্ণং নিয়ানং হরয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎ পতন্তি। ত আববৃত্রন্ ৎ সদনাদতস্যাদিদ্ ঘৃতেন পৃথিবী ব্যুদ্যতে।। ঋগ্বেদ- মন্ডল-১/সুক্ত-১৬৪/মন্ত্র- ৪৭
ভাবার্থ- সুর্যের তীব্র কিরণ জলের উপর পতিত হয় এবং জলকে হরণ করে নিয়ে যায়। সেই জল বাদল রুপে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। সেই কারনে যেই স্থানে বাদল বা মেঘ থাকে সেইখানে সূর্যের আলো পরে না আবার প্রকৃতির নিয়মে বাদল বা মেঘ জলরূপ পরিগ্রহ করে পূথিবীর উপর বর্ষন করে ভূমিকে আদ্র করে


👉১২:

সুমিত্রিয়া নৎ আপৎ ওষধুয়ঃ সন্তুদুর্মিত্রিয়াস্তস্মৈ সন্তু য়োস্মান্ দ্বেষ্টি য়ং চ বয়ং দ্বিস্মঃ। যজুর্বেদ-৬ /২২
ভাবার্থঃ- হে পরমেশ্ব! আপনার কৃপাবলে যে প্রাণ ও জলাদি পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে ও সোমলাতাদিরূপ ঔষধি সকল আমার জন্য সুখকারক ও সুখদায়ক হউক
য়থা সোম ওষধীনামুত্তমো হবিষাং কৃতঃ
তলাশা বৃক্ষা ণামিবাহং ভূয়াসমুত্তমঃ।।
অথর্ব্বেদ-৬/১৫/৩

ভাবার্থঃ- ঔষধী অর্থাৎ বনস্পতির সাররূপ সোমতত্ত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। আমি তাকে প্রাপ্ত করে তদ্রপ হয়ে যাই অর্থাৎ রোগরূপী মহাব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে উত্তম স্বাস্থ্যবান হয়ে যাই
বিদ্র• বেদে বর্নিত সোম অন্য কোন পদার্থ নয় সে তো সার স্বরূপ প্রাণতত্ত্ব যা সৌম্যগুন বনষ্পতি ও বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত জীবনী শক্তি। বেদে সোমের ব্যবহার বহুবার এসেছে
যারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক কৃত "অথর্ববেদীয় চিকিৎসা শাস্ত্র" এবং বৈদ্য পঃ রামগোপাল শাস্ত্রীর কৃত " বেদোঁ মেঁ আয়ুর্বেদ" বই দুটি অবশ্যই পাঠ করবেন।)


👉১৩:

অহস্তা যদপদী বর্ধত ক্ষা শচীভির্বেদ্যানাম্। শূষ্ণং পরিপ্রদাক্ষিণিদ্ বিশ্বায়বে নিশিশ্নথঃ।।
ঋগ্বেদ- মন্ডল১০/সুক্ত২৩/মন্ত্র-১৪

বঙ্গানুবাদ:- পৃথিবী যদিও হস্তপদহীন তথাপি ইহা চলিতেছেঅবশ্য জ্ঞাতব্য পরমাণুর শক্তির দ্বারা সূর্যের চারিদিকে ইহা প্রদক্ষিণ করিতেছে। হে পরমাত্মন! সমগ্র মানবের মধ্যে আস্তিক্য বোধ জানাইবার জন্যেই তুমি এরূপ রচনা করিয়াছে