Ticker

200/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে নিয়ে করা বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব (পর্ব-২)

 


👉শূদ্র তপস্বী শম্বুককে কেন ভগবান রামচন্দ্র হত্যা করেছিল?

দেবত্বটুকু বাদ দিলে রামায়ণে বর্ণীত রামচন্দ্র ভারতের সন্তান৷ যিনি প্রাচীন ভারতের দর্শণ, মূল্যবোধের প্রতীকও৷ সমালোচকরা প্রায়শই রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে বর্ণীত ‘শম্বুক হত্যা’র বিষয়টি নিয়ে রামের সমালোচনা করে থাকেন৷ কিন্তু সত্যিই কী রামের মতো এক চরিত্রের হাত দিয়ে শম্বুকের হত্যা সম্ভব? ইতিহাস এবং রামায়ণে বর্ণীত বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনা কী ‘রামের হাতে শম্বুক বধে’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামের হাতে শূদ্র তপস্বী শম্বুকের বধ লেখা রয়েছে। ঘটনাটি এই রূপে বর্ণিত,লঙ্কা থেকে ফিরে রাম রাজা হয়েছেন। হঠাৎ কিছুদিন পর এক ব্রাহ্মণ তার অকালমৃত সন্তানকে নিয়ে রামের দরবারে আসেন এবং বলেন যে রামের রাজ্যে নিশ্চয় কোনও পাপ হচ্ছে, তাই তার ছেলে অকালে মারা গেল। তখন নারদ মুনি সহ অনেকে বলেন নিশ্চয় রাজ্যের কোথাও কোনও শূদ্র তপস্যা করছে, তাই এমনটা হয়েছে। এরপর দক্ষিণ দিকে গিয়ে রাম শম্বুকের খোঁজ পান। শম্বুক শূদ্র হয়েও তপস্যা করছে জানতে পেরে তার মাথা কেটে ফেলেন৷

এই ব্যাপারে মূল পর্বের আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু ইতিহাস ঘেঁটে নিই আসুন। প্রাচীন ভারতে বর্ণব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল না। বর্ণ ছিল পেশা ভিত্তিক এবং পেশা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্ণও পরিবর্তন করা যেত।

এর একটা বড় উদাহরণ দিই। ভারতবর্ষে রামায়ণের যুগে একজন শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ ছিলেন ঋষি বিশ্বামিত্র। তিনি জন্মগত ভাবে ব্রাহ্মণ ছিলেন না। কর্ম এবং তপস্যার গুণে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন। এই বিশ্বামিত্রের প্রতি রামের আচরন কীরূপ ছিল?

প্রজার বিপদ শুনি রামের তরাস। / ধাইয়া গেলেন রাম বিশ্বামিত্র-পাশ।। ২১৯৯

মুনির চরণ ধরি বলে রঘুমণি/ প্রজালোকে রক্ষা প্রভু করহ আপনি।। ২২০০

কৃত্তিবাসী রামায়ণ (আদিকাণ্ড)/পুরো রামায়ণ জুড়ে রাম এবং অন্যান্য চরিত্ররা বিশ্বামিত্রকে গুরুজ্ঞানে পুজো করে গেছেন৷

যে কোনও রচনা কিংবা মহাকাব্য সেই সময়কার সমাজের ছবি তুলে ধরে। যেমন এই বৈদিক যুগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল চতুরাশ্রম,

ব্রহ্মচর্য – শৈশব থেকে যৌবন অবধি গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ। গার্হস্থ্য – এরপর গুরুগৃহ থেকে ফিরে বিবাহ ও সংসার ধর্ম। বাণপ্রস্থ – সংসার ত্যাগ করে বনের জীবন যাপন। সন্ন্যাস – সবশেষ ঈশ্বরের আরাধনায় দিন কাটানো। এই চতুরাশ্রমের প্রথম দুটি আশ্রমের উদাহরণ রামায়ণের শুরুতে রামের জীবনে পাওয়া যায়, পঞ্চবর্ষ গত হয় হাতে দিল খড়ি। পড়িতে পাঠান রাজা বশিষ্ঠের বাড়ি।।১৯১৩ আদিকান্ড (কৃত্তিবাসী রামায়ণ)

তাহলে বুঝতেই পারছেন প্রাচীন ভারতের সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়েই রামায়ণ লেখা। এখন সে যুগে বর্ণপ্রথা ছিল এটাও যেমন সত্য। তেমনই সত্য অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা বর্ণ পরিবর্তন সম্ভব ছিল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে শম্বুক তপস্যা করে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করতে চাইলে তা পাপই বা হবে কেন? আর কেনই বা রাম তাঁকে বধ করবেন? এর উত্তরে পরে আসছি তার আগে আরও কিছু বিষয় এখানে বলে নিই।

১) রাম অযোধ্যার রাজকুমার। অযোধ্যা সেই সময় ভারতের শ্রেষ্ঠ জনপদ। রাম চাইলেই রাবণকে পরাজিত করতে প্রতিবেশী রাজাদের সাহায্য নিতে পারতেন। অন্তত চেষ্টা করে দেখতে পারতেন। কিন্তু উনি তা না করে কাদের সাহায্য নিলেন? বানর, নিষাদ এদের। অর্থাৎ যারা বর্ণগতভাবে শূদ্রেরও নীচে। তাদের সঙ্গে থাকলেন, উঠলেন, বসলেন, খেলেন।

২) শবরীকে মনে আছে? ইনিও ক্ষত্রিয় ছিলেন না। ব্রাহ্মণও নন। তবে রাম, এঁর এঁটো কুল খেয়েছিলেন।

৩)ওই ব্যক্তি বর্ণে শূদ্র ছিলেন। উনি নিজ বর্ণাশ্রিত ধর্ম পালন না করে ব্রহ্মার তামসিক তপস্যা করছিলেন ইন্দ্র পদ লাভের আশায়। এরূপ বর্ণাশ্রম উলংঘনকারী তামসিক তপস্যার দরুন ব্রাহ্মণের পুত্রনাশ হচ্ছিলো রাজ্যে। উপরন্তু এরূপ তপস্যা দ্বারা ইন্দ্র পদ লাভ করলে সৃষ্টিতে উতশৃংখলা দেখা দিতো। তাই রাম তাকে বধ করেছে। 

জিনিসটা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বামনাবতারে বামনদেবরূপে শ্রীকৃষ্ণ বলি মহারাজের ১০০তম অশ্বমেধ যজ্ঞ বিনষ্ট করেছিলো। কারণ বলি মহারাজ ইন্দ্র পদ লাভের জন্য এ যজ্ঞ করছিলেন।